দেশের খবর: সংসদে পাসকৃত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’র বিভিন্ন ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এরই মধ্যে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। আজ দ্বিতীয় দিনের মত ধর্মঘট চলছে।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) সংগঠনটির সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে যুগোপযোগী আধুনিক ও উন্নত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে। আমাদের দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার আইন পাস করলেও অনেকগুলো ধারা শ্রমিকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যেখানে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা জানি দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না, কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে। দুর্ঘটনা মামলায় তদন্ত করে অপরাধী হিসেবে বিচারে ৩০২ ধারায় শ্রমিকদের ফাঁসি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালায় তার ওপর আবার বিচারের মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন এর প্রধান চালিকা শক্তি শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সমাজ ও জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আইনের এই ধারাগুলো বিশেষ মহলকে খুশি করতে পারলেও জাতীয় জীবনে চরম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। যা আমাদের কাম্য নয়।
তাই এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আমরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এ লক্ষ্যে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে।
শ্রমিকদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো:
সড়ক দুর্ঘটনায় সকল মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে।শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে। ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করতে হবে। সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
এদিকে, রবিবার (২৮ অক্টোবর) প্রথম দিনের ধর্মঘটের কারণে রাস্তায় কোন গাড়ি না থাকায় মোড়ে মোড়ে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এ সময় অনেকেই রিক্সা বা সিএনজিতে করে অনেককেই গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। এ বাহনগুলোকে দেখা যায় অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকাতে। উত্তর বাড্ডা থেকে উত্তরা যেতে জন প্রতি ভাড়া নিচ্ছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। রাস্তায় দুই একটি বিআরটিসির বাস দেখা গেলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিন পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা এই ধর্মঘটের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধের কারণে চরম ভোগান্তিতে যখন সাধারণ জনগণ তখন যারা ভিন্ন উপায়ে অফিসে বা নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের ওপর আক্রমণ করছেন শ্রমিকরা।
সায়েদাবাদ, গাবতলী, গুলিস্তান ও মহাখালী বাসটার্মিনাল ও আশপাশের এলাকায় শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি অনেক যাত্রী ও চালকের মুখ, কাপড়ে গাড়ির ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল (পোড়া মবিল) লাগিয়ে দেয় তারা।
অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলদের চালকের মুখেই শুধু নয়, তাদের এ অসভ্যতার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না অ্যাম্বুলেন্সও।