বিদেশের খবর: শ্রীলঙ্কায় তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে ক্ষমতার লড়াই। একদিকে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও তার নতুন নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে। অন্যদিকে তার বরখাস্ত করা প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে ও স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। ক্ষমতায় কে থাকবে আর কে থাকবে না- সে প্রশ্নে সেখানে অনাস্থা ভোটের ডাক উঠেছে। তাতে সংখ্যালঘু তামিলরা নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের পক্ষে রয়েছে। এরই মধ্যে তারা পরিষ্কার করেছে এ বিষয়টি। শনিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে তামিলদের জোট তামিল ন্যাশনাল এলায়েন্স (টিএনএ) গত সপ্তাহে নতুন করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগকে ‘অসাংবিধানিক ও বেআইনি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে অপসারণের জন্য বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তাকে সমর্থন করবে টিএনএ’র সদস্যরা। এতেই কি ক্ষমতা থেকে উৎখাত হবেন মাহিন্দ রাজাপাকসে? এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তামিলরা রণিল বিক্রমাসিংহেকে সমর্থন করলেও মাহিন্দ রাজাপাকসেকে ক্ষমতা থেকে সরানো এক জটিল সমীকরণে রূপ নিতে পারে। শ্রীলঙ্কার ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে তামিল জোট টিএনএ’র রয়েছে ১৫ জন এমপি।
এই ভোট যদি তারা রণিল বিক্রমাসিংহেকে দেন বা তাকে সমর্থন করেন তাহলে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটে বড় প্রভাব পড়বে। কারণ, রণিল বিক্রমাসিংহে ও মাহিন্দ রাজাপাকসে দু’জনের প্রতি জনেরই পার্লামেন্টে প্রায় ১০০ জন করে এমপি রয়েছেন। ফলে হিসাবের অঙ্কটি অনেক কঠিন হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, টিএনএ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে রাজাপাকসেকে পরাজিত করা সহজ হবে না। কারণ, তিনি ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)’র কমপক্ষে ৬ জন এমপি’র সমর্থন পাচ্ছেন। যদি তা পান তাহলে তিনি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন। যদি তাই হয় তাহলে তিনিই থেকে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে কমপক্ষে ১১৩ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে হয়।
গত ২৬শে অক্টোবর প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা তার সাবেক মিত্র রণিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করেন। এ পদে নিয়োগ দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। এই রাজাপাকসেকে সিরিসেনা ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন রণিল বিক্রমাসিংহে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য সরকার নির্ধারিত বাসভবনেই তিনি অবস্থান করছেন। সেখান থেকে বের হন নি। সবকিছু মিলে মারাত্মক এক সাংবিধানিক সংকটে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। শুধু তা-ই নয়। প্রেসিডেন্ট আগামী ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। রণিল বিক্রমাসিংহে নিজেকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন। তিনি নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে চেয়েছেন পার্লামেন্টে। তার এ ডাকের প্রতি শুক্রবার সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ। ওই অনাস্থা ভোট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে বলা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পার্লামেন্ট যত বেশি দিন স্থগিত রাখা যাবে ততই লাভবান হবে সিরিসেনা ও রাজাপাকসের রাজনৈতিক জোট ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম এলায়েন্স (ইউপিএফএ)। আর তাতে রণিল বিক্রমাসিংহের জন্য অশনি সংকেত বেজে উঠতে পারে। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে টিএনএ বলেছেন, দেশের এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের নিরপেক্ষ থাকার অর্থ হবে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ করে দেয়া। দীর্ঘদিন এই জোটটি রাজাপাকসের বিরোধিতা করে এসেছে। মাহিন্দ রাজাপাকসে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। তিনি ২০০৯ সালে কয়েক দশক ধরে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করেন। অভিযোগ আছে, ২৫ বছর ধরে চলমান এই গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধের শেষ ৫ মাসেই হত্যা করা হয়েছে ৪০ হাজার মানুষকে। এর বেশির ভাগই তামিল বেসামরিক মানুষ। এর জন্য রাজাপাকসেকে দায়ী করা হয়।