অনলাইন ডেস্ক: দেশজুড়ে রয়েছে ২ হাজার ৮৭৯টি জরাজীর্ণ পোস্ট অফিস ভবন। এর বেশিরভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী। এবার এসব পোস্ট অফিস ভবন সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ৬টি বিভাগে ৬টি জিপিও ভবন, ২৪ জেলায় জেলা পোস্ট অফিস ভবন, ঢাকা মহানগর এলাকায় ৮টি এবং রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১টিসহ মোট ৯টি সাব পোস্ট অফিস ভবন এবং রাজধানীর বনানীর ডাক জীবনবীমা অফিসের নিজস্ব ভবন নতুন করে নির্মাণ করা হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ডাক অধিদফতর সরকারি ডাকসেবা দানকারী একটি পুরনো সংস্থা। এর সেবার পরিধি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশজুড়ে এ সংস্থার প্রায় ২ হাজার ৮৭৯টি নিজস্ব ভবন রয়েছে, যার অধিকাংশই পুরনো এবং জরাজীর্ণ। এ ছাড়া, এগুলোর বিদ্যমান স্পেসও বর্তমান চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে ডাকে পাঠানো জিনিসপত্র অক্ষুণ্ণ রাখাসহ জনগণের আমানতের অর্থের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজস্ব বাজেটের আওতায় ডাকঘরগুলো সংস্কার করা হলেও অতি পুরনো বেশ কিছু ডাকঘর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই এসব জনাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনাজীর্ণ পোস্ট অফিস ভবন সংস্কার সংক্রান্ত একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডাক অধিদফতরের নিজস্ব জমিতে সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদরসহ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও ফরিদপুর জেলা সদরে জিপিও ভবন, জরুরি ভিত্তিতে ২৪ জেলায় জেলা ডাকঘর, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮টি এবং রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকায় ১টি উপ-ডাকঘরসহ বনানীতে ডাক জীবন বীমা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে পার্সেল ও লজিস্টিক গ্রহণ, সর্টিং ও বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস এবং অর্থ মজুদের ভল্ট রুমসহ উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান উপযোগী অবকাঠামোগত সুবিধা সম্বলিত প্রস্তাবিত ভবনসমূহের স্থাপত্য নকশা প্রণয়নপূর্বক প্রকল্পের ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ডাক মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরও জানিয়েছে, ডাক বিভাগ থেকে জমা দেওয়া ‘ডাক অধিদফতরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় ডাক অধিদফতর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে নতুন বিভাগ, সিটি করপোরেশনের সংখ্যাও। পাশাপাশি দেশের সব মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়েছে। বিশেষ করে, শহর এলাকার জনগণ কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু ডাক অধিদফতরের অবকাঠামো সে হারে উন্নয়ন বা সম্প্রসারিত হয়নি। বর্তমানে দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ৪টি বিভাগে জিপিও ভবন রয়েছে। দেশের জেলা শহরগুলোয় পুরনো ডাকঘরগুলোকেই জেলা ডাকঘর হিসাবে ব্যবহার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, ডাক অধিদফতর বিভিন্ন ডাক সেবার পাশাপাশি এজেন্সি সেবা হিসেবে অর্থ বিভাগের কতিপয় আর্থিক সেবা, যেমন– ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র, ডাক জীবন বীমা সেবা ইত্যাদি প্রদান করছে। বর্তমানে ডাক জীবন বীমা পলিসি গ্রহণকারীর সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি, যা প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু বীমা গ্রহণকারীদের উন্নত ও দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য অধিদফতরের এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অবকাঠামো সুবিধা নেই।
উল্লেখ্য, আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যবহার বাড়ায় ডাক সেবা খাতে সাধারণ চিঠিপত্র কমে গেছে। তবে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশে এবং বিদেশে পার্সেল ও লজিস্টিক পরিবহন সেবার পরিধি বেড়েছে। কিন্তু ডাক অধিদফতরের বিদ্যমান পুরনো ডাকঘরগুলোয় বিভিন্ন আকৃতির ও ওজনের পার্সেল ও লজিস্টিক গ্রহণ, প্রসেসিং ও বিতরণের প্রয়োজনীয় স্পেস নেই।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রকল্পের ডিপিপি’র উপর গত ৭ জুন পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভায় ঢাকার বনানীতে প্রস্তাবিত ডাক জীবন বীমা ভবন নির্মাণের উচ্চতার বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়াসহ কিছু শর্তে প্রকল্পটি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ পিইসি সভার শর্তগুলো পূরণ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করেছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি’র প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তবানায় বলা হয়েছে, এর আওতায় জিপিও ভবন নির্মাণ করা হবে ৬টি। জেলা ডাকঘর নির্মাণ করা হবে ২৪টি। উপ-ডাকঘর নির্মাণ করা হবে ৮টি এবং ডাক জীবন বীমা ভবন নির্মাণ নির্মিত হবে ১টি। এ ছাড়া, এ প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভৌত কাজ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভৌত অবকাঠামো সম্প্রসারণের মাধ্যমে ডাক অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন এবং গ্রাহকদের দ্রুত ও নিরাপদ ডাক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা যাবে।