আব্দুল আলিম :
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে খুলনা বিভাগে প্রথম পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর থানা। সেখানে উড্ডয়ন হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
শ্যামনগরকে মুক্ত করতে বৃহত্তর খুলনার বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করে হানাদার বাহিনীর সাথে প্রাণপণ লড়াই করেন।
উল্লেখ্য এই শ্যামনগরে ৭১ এর ৭ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রথম হানাদার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। ‘শ্যামনগর-গোপালপুর’ যুদ্ধ নামে পরিচিত এ যুদ্ধে ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সুবেদার ইলিয়াস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল কালাম আজাদ ও ২ জনের নাম অজ্ঞাত। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিহত হন আলী মণ্ডল, ফকির আহম্মদ, নিতাই দাস প্রমুখ। আহত হন পৌর দাস, সুবল মৃধাসহ মোট ১২ জন।
লেফটেন্যান্ট মাহফুজ বেগের নেতৃত্বে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন শ্যামনগর সদর নকিপুর ও চন্ডিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবুল হোসেন, সরদার মিজানুর রহমান (স্থানীয় কমান্ডার), আরো একজন স্থানীয় কমান্ডার ডি,এম ইব্রাহিম খলিল, আব্দুল বারেক গাজী, হাশেম আলী, ইন্তাজ, নিরাপদ মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, হাবিল, ফজলু, আব্দুল লতিফ, মজিদ, সাত্তার ,কেয়া তলার জি,এম আব্দুল মজিদ, গোপালপুরের আব্দুল মজিদ, হায়বাতপুরের এস কে মাহফুজ, বাদঘাটার শাহাদাৎ হোসেন, নওশের, মুজিবর, কলবাড়ীর নিরাপদ,আটুলিয়ার আমজাদ হোসেন, কাশিমাড়ীর শামছুর রহমানসহ অনেকে।
এরপর আরো ৪টি যুদ্ধ সংঘটিত হয় হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর। এসব যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হন। শেষ যুদ্ধে স্বাধীনতাকামী ২৮ জন সাধারণ মানুষকে হানাদার বাহিনী হত্যা করে।
১৮ নভেম্বর ১৯৭১ দিবাগত রাতে শ্যামনগর আক্রমণের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন এবং পরিকল্পনা মাফিক তারা আক্রমণ শুরু করেন। আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ওই রাতে হানাদার বাহিনী শ্যামনগর সদরের পূর্বদিকে বিলের মধ্যে দিয়ে পাটনিপুকুর হয়ে পিছু হটে যায়। তারা আর ফিরে আসেনি। ফলে ১৯ নভেম্বর শ্যামনগরমুক্ত হয়।
১৯ নভেম্বর ছিলো ঈদুল ফিতরের আগের দিন। ওই দিন শ্যামনগরে খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্ব প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। স্বাধীনতাকামী মানুষ ‘জয় বাংলা’ধ্বনি দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে।।
এ উপলক্ষ্যে শামনগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে আজ শ্যামনগরে দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সকালে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা শ্যামনগরের প্রধান প্রধান সড়কগুলি প্রদক্ষিন করে।এ সময়ে উপস্হিত ছিলেন শ্যামনগরের ইউএনও মো: কামরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দেবীরন্জ্ঞন মন্ডল,অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিন্সিপাল জি,এম,ওসমান গনি , মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আবুল হোসেন,মুক্তিযোদ্ধা
সন্তান কমান্ড,সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগন, শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সম্পাদক জাহিদ সুমন,সিনিয়র রিপোর্টার শেখ আফজাল,আবু সাঈদ সহ সাংবাদিকবৃন্দ।