দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেললেও বিএনপি ও তার জোটের এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। চলছে দেন দরবার।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সাক্ষাতকার দিয়েছে প্রায় ৩ হাজার। এত বিশাল সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে আসন ঠিক করতে জোটের সঙ্গে একপ্রকার বিপাকে পড়েছে দলটি।
বিভিন্ন সময় বিএনপির কাছ থেকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ দল গণফোরাম একাই ১০০ আসন দাবি করে। আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি দাবি করে ২০, মাহমুদুর রহমান মান্নার নিবন্ধনহীন নাগরিক ঐক্য দাবি করে ৩৫টি আসন। আর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১২টি।
এই সব দাবি দাওয়া নিয়ে গত রোববার কয়েকবার বৈঠক হয় নিজেদের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে দুই জোটের জন্য সর্বোচ্চ ৬৫ আসন ছাড়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এর মধ্যে নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের জন্য সর্বোচ্চ ২০টি আসন এবং ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ৪৫টি আসন দেয়া হবে।
মূলত আসন ভাগাভাগিতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জামায়াতকে নিয়ে। জামায়াত প্রথমে ৫৪টি আসন দাবি করে। শেষ পর্যন্ত তারা ৩৫টি আসনে অনড় থাকে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২৪ আসন ছাড় দেয়া হবে জামায়াতকে। কিন্তু তারা এখনো ৩৫ আসনের আশা নিয়ে বসে আছে।
আর ঐক্যফ্রন্ট এর মধ্যে মান্না, আ স ম আব্দুর রব কে নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা যেসব আসন দাবি করছেন তা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ আসন। প্রথম দিকে ড. কামাল হোসেন এর গণফোরাম নিয়ে বেশ সমস্যা পোহাতে হয়েছে। তবে সেটি অনেকটাই নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে মতিঝিলের ড. কামাল হোসেন এর চেম্বারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় পরবর্তীতে রাতে গুলশানে বৈঠক হয়।
এদিকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থীর তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।
আসন বণ্টন নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নানা আলোচনা হয়েছে। এটি নিষ্পত্তির ব্যাপার। আমরা ৩৫ আসন চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত কত হবে সেটা পরে দেখা যাবে। আশা করি একটি সমাধান হয়ে যাবে।
আসন বণ্টন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এলডিপি সভাপতি ড. কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ বলেন: আমরা কোনো অন্যায় আবদার করতে চাই না। আমার দলের যাদেরকে যোগ্য মনে হয়েছে তাদেরকে চেয়েছি। এই বার বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে জেতার সুযোগ নেই। নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। সেক্ষত্রে আমি বলবো সকলের ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র ও দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি এই নির্বাচনে জিতে আসা। তাই ঐক্যফ্রন্টের সকল দলকে ছাড় দিতে হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন: সকলের মন খুশি করে তো কোনোদিন নির্বাচন হয় না। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে এমন প্রার্থীদের ছাড় দেয়া হবে। আমাদের এই নির্বাচনে অবশ্যই জিততে হবে। তাই অনেক কিছু বিবেচনা করে আসন ছাড় দেয়া হচ্ছে।
এদিকে দলীয় প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। প্রতি আসনে একজন করে বিকল্প রেখে এ তালিকা করা হয়। আজ চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হবে এবার। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রতিটি জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করায় এবার দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহাসচিবকেই প্রার্থী নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে বিএনপিকে।