বিদেশের খবর: কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও ফ্রান্সে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
শনিবার রাজধানী প্যারিসের বিভিন্ন রাস্তায় জড়ো হয়ে পুলিশি বেষ্টনীতে প্রতিবাদ করে হলুদ গেঞ্জি পরিধান করা হাজারো বিক্ষোভকারী। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে এদিন প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। এর মধ্যে রাজধানী প্যারিসেই ছিল ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী।
আন্দোলনের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় আন্দোলনকারীদের অনেকেই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটের আশঙ্কায় আগেই দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফ্রান্সের এই আন্দোলন ‘ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্ট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, পেপার স্প্রে ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। প্যারিসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংঘর্ষে অন্তত ১২৬ জন আহত হয়েছেন। যদিও তাদের আঘাত তেমন গুরুতর কিছু নয়। তিন পুলিশ কর্মকর্তাও এ সময় আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সারা দেশে আটক করা হয় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু লোককে আটক করা হয়েছে মাস্ক, হাতুড়ি, স্লিংশট ও পাথর বহনের জন্য। এসব জিনিস দিয়ে তারা পুলিশকে আঘাত করার চেষ্টা করেছে।
চার সপ্তাহ ধরে চলে আসা এই সহিংস বিক্ষোভের কারণে আইফেল টাওয়ার এবং পর্যটকপ্রিয় অন্যান্য জায়গায় প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার লোক মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে, ফ্রান্সের পর ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ এদিন সন্ধ্যায় এক টেলিভিশন বক্তব্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গোলযোগ সৃষ্টিকারীরা এখনো সক্রিয় রয়েছে। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন সময় হচ্ছে, ফ্রান্সের ঐক্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা।’
মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে করের বোঝা হ্রাস করেছেন। তারপরও বিক্ষোভকারীরা শ্রমিক, অবসরপ্রাপ্ত লোকজন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলছে এমন অর্থনৈতিক বিষয়ে নজর দিতে সরকারের প্রতি নতুন দাবি উত্থাপন করছে।
সরকারি কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, চলমান আন্দোলনের কারণে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাবে। কেউ কেউ সরকারের টিকে থাকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।