দেশের খবর: জাতীয় ঐকফ্রন্টের শীর্ষনেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার লক্ষ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আলামত নয়। আর সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে জনগণের মালিকানা থাকে না। আর জনগণের মালিকানা না থাকলে স্বাধীনতা থাকে না।
তিনি বলেন, আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকব। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। বুধবার পৌনে ৫টায় হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারতে গেলে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বিমানে বিকাল ৪টায় সিলেট পৌঁছান ড. কামাল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সিলেটে পৌঁছে তারা প্রথমেই হযরত শাহজালালের (রহ:) মাজার জিয়ারত করেন। সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি জনসভার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এর মধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দক্ষিণ সুরমায় ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে জৈন্তাপুরের বটতলার সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট পৌঁছার আগেই দুপুরে হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে আনা মাইক ব্যবহারে বাধা দেয় পুলিশ।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, অনুমতি ছাড়া মাইক ব্যবহার করা যাবে না। পরে দরগাহ প্রাঙ্গণে মহিলা এবাদতখানা ও বিশ্রামাগারের সামনে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের জন্য রাখা একটি সোফা ও মাইক নিয়ে যায় পুলিশ।
এ সময় ওসি বলেন, ঐক্যফ্রন্টকে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে, দরগাহে নয়। কোনো অনুমতিও চাওয়া হয়নি। কথা হয় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সঙ্গে।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, চেয়ার, টেবিল, মাইক নিয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তাজনিত কোনও সহযোগিতা লাগবে কি-না জানতে চেয়েছিল পুলিশ। আমরা বলেছি, আপাতত তার কোনও প্রয়োজন নেই।
রেজিস্ট্রারি মাঠে সভা না করার কারণ বলতে গিয়ে মহানগর বিএনপি নেতা ও সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদি যুগান্তরকে বলেন, সময় স্বল্পতা ও একাধিক কর্মসূচি থাকায় রেজিস্ট্রি মাঠের সভা স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দরগায় মাজার জিয়ারতের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার জন্য একটি ছোট মঞ্চ ও মাইক বসানো হয়েছিল। পুলিশ সবকিছু নিয়ে গেছে। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সিলেট সফর নিয়ে দফায় দফায় কর্মসূচি বদল করা হয়। গত দুই দিনে কর্মসূচিতে কয়েক দফা পরিবর্তন আনা হয়। কী কারণে এমন হচ্ছে এ ব্যাপারে মুখ খুলতেও রাজি হননি ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত স্থানীয় নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কিছুটা সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে।
বুধবার দুপুর ১টায় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, মাজার জিয়ারতের পর নেতারা সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে পথসভায় করার কথা থাকলেও আকস্মিকভাবে তা স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে সিলেট-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী বুধবার বেলা ১১টার বিএনপির জরুরি বৈঠক শেষে যুগান্তরকে জানিয়েছিলেন, তার নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে পথসভা হবে। সেখানে ড. কামাল প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেছেন, কবে কখন, কোথায়, কী হবে তা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। এর ফলে কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, কৌশলগত কারণে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর সিলেটে আসেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। সেদিন সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তখনও সিলেটে সমাবেশ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ঐক্যফ্রন্টকে।