নিজস্ব প্রতিনিধি: শীতের মৌসুম দেখা দেওয়ার সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলের মানুষের দেখা যায় বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার মাঝে সময় পার করতে। সেই সাথে দেখা যায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে সকাল হলেই নারীদের কুমড়ার বড়ি তৈরিতে ব্যস্ততা।
শীতের আগমনে গ্রামে গ্রামে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। শীতের সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রাম অঞ্চলের নারীদের মাঝে। কুমড়া বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক উপাদন। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা।
বর্ষাকাল বাদে বাকী মাস গুলোতে কমবেশি কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। শীতকাল কুমড়া বড়ি তৈরীর ভরা মৌসুম। এসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই কুমড়ার বড়ি তৈরী করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করা হয়ে থাকে।
শীতের সময় কুমড়া বড়ির চাহিদা থাকে বেশী, আর গ্রাম অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরির মাধ্যমে বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়ে থাকে।
কুমড়ার বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ হল মাসকলাই এর ডাল আর চালকুমড়া। এর সাথে সামান্য মসলা। বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ৯০ থেকে ১শ ২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসেবে প্রতিটি চালকুমড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। ৪-৫ কেজি চালকুমড়ার সাথে ২ কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল হয় বলে মনে করেন গ্রামের অধিকাংশ নারীরা।
প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিস্কার করে নিতে হবে অথবা না ভেঙ্গে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা মাসকলাই পানিতে ভেঁজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটায় বেটে নিয়ে কুমড়ার বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তবে এলাকার বেশ কিছু অঞ্চলে কুমড়ার বড়ি তৈরির মেশিন থাকায় অনেকে মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়া মিহি করা হয়। যদিও সাতক্ষীরা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার সব জায়গায় মেশিন না থাকায়, হাতে তৈরি করছে স্থানীয় নারীরা।
এরপর দুইটি উপকরনের মিশ্রণে কুমড়া বড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়। মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে রোদে বড়ি বসানো শুরু করা হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানো হয়। দেখতেও খুব ভালো লাগে বড়ি বসানোর দৃশ্য!
কুমড়া বড়ি বসানোর পর কয়েক দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। সূর্য্যের আলো কম হলে ৪-৫ দিন পর্যন্ত শুকাতে সময় লেগে যায়। শুকানোর পর কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে শুকনো পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামের কুলসুম বেগম বলেন, ৪-৫ কেজি কুমড়ার সাথে দুই কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল তৈরি হয়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিস্কার করা, আর পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হয়, সেই সাথে অনেক সময় লাগে। তবুও আমাদের এই শীতের সময় বেশ ভালো লাগে এই কাজ গুলো করতে।
এখন খোসা ছাড়ানো মাসকলাই বাজারে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ে বড়ি তৈরির মিশ্রণ তৈরী করা খুব সহজ হয়েছে। যেসকল এলাকায় মেশিনের দ্বারা তৈরি করা হয় তাদের একটু পরিশ্রম কম বলে মনে করছেন নারীরা। এতে করে অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণ কুমড়া বড়ি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।
কেজি প্রতি কুমড়ার বড়ি তৈরি করতে প্রায় ১২০-১৩০টাকা মত খরচ হচ্ছে। আর বাজারে ২শ থেকে আড়াই’শ টাকা দরে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়ে থাকে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হয়।