রাজনীতির খবর: দলের জন্য উল্লেখ করার মতো ত্যাগ ও অবদান আছে এমন নারীদেরই সংরক্ষিত আসনে মনোনীত করবে আওয়ামী লীগ। তবে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করা হতে পারে। যেসব জেলা পিছিয়ে আছে কিংবা যেসব জেলা থেকে দীর্ঘদিন কেউ মন্ত্রী হননি অথবা যেসব জেলায় অতীত বর্তমান মিলিয়ে দলের প্রভাব কম, সেসব জেলা থেকেও নারী সংসদ সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে যিনিই সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হোন না কেন, তাকে জনঘনিষ্ঠ ও ভালো ইমেজসম্পন্ন হতে হবে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নারী সংসদ সদস্য হিসেবে এবার মনোনয়ন পেতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দু’একজন নেতা, যারা ফোকাসের আড়ালে থাকেন এবং এখন পর্যন্ত কোথাও কখনও কোনও লাভজনক পদে ছিলেন না। এছাড়া অতীতের মতোই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত, বিভিন্ন সেক্টরের পেশাজীবী নারী, দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও অবদান আছে এমন কেউ কেউ বিবেচিত হতে পারেন। এছাড়া দলের ত্যাগী কোনও নেতা বা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং বর্তমানের তাদের পরিবার অসহায় অবস্থায় আছে, তেমন পরিবার থেকে কাউকে নারী সংসদ সদস্য বানানো হতে পারে। আর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তান, দলের দুঃসময়ে ভূমিকা পালন করা নেতাদের সন্তান, দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন এমন পরিবার থেকেও দু’একজন সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তারাই অগ্রাধিকার পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দশম সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে দু’একজন ছাড়া কেউই থাকছেন না এবার। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ-খবর নিয়ে একটি খসড়া তালিকা করেছেন। এই তালিকায় যোগ-বিয়োগ করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সার্বিকভাবে দলের জন্য ত্যাগ ও অবদান আছে এমন নেতাকর্মী বা তার পরিবারকে সংরক্ষিত আসনের জন্য বিবেচনা করা হবে। আর আগে যেসব জেলা সংরক্ষিত সংষদ সদস্য হতে বঞ্চিত হয়েছে, সেসব জেলা থেকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, সরাসরি নির্বাচনের তিনশ’ আসনের প্রতি ছয়টির বিপরীতে একটি সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য করার বিধান আছে। এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মোট আসন ২৮৮টি। এর মধ্যে একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৭টি আসন। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করায় এই সংখ্যা এখন ২৫৬টি। মহাজোটগতভাবে হিসেবে করলে জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী সদস্যের মধ্যে ৪৮টি পায় জোটভুক্ত দলগুলো। আর দলীয় আসনের হিসেব করলে আওয়ামী লীগ পায় ৪৩টি। আবার মহাজোটে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে জিতে আসা ২২টি আসনের বিপরীতে চার জন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য দেওয়া হচ্ছে। তাহলে ১৪ দলের অন্য শরিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের হাতে থাকে ৪৪টি আসন। কিন্তু মহাজোটের অন্যান্য দলগুলো কেউই এককভাবে ৬টি আসন না পাওয়ায় সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ সদস্য মনোনয়ন দিতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন নারী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে। জাতীয় পার্টি থেকে দুজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে একজন নির্বাচিত হয়েছেন। গত দশম জাতীয় সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সংষদ সদস্য ছিলেন ২৩ জন।