দেশের খবর: সাংবাদিকদেরকে সমাজের বংশীবাদক বা ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার তুরাগ নদীরক্ষা সংক্রান্ত রিটের রায় ঘোষণার একপর্যায়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, সংবাদপত্র সমাজের নানা অনিয়মের তথ্য তুলে না ধরলে আমরা সে সব অনিয়ম সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। এজন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরো (ইফেকটিভ) কার্যকর সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করে আদালত বলেন, ‘তবে এটাও বলতে হয় যে: আমাদের দেশে এখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নেই বললেই চলে।’
তুরাগ নদীরক্ষা সংক্রান্ত রিটের এ রায় ঘোষণার জন্য আবার আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে বুধবার হাইকোর্টের এই বেঞ্চ তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ বলে ঘোষণা করেন, যা দেশের সব নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দেশের নদ-নদীর কিছু আইনি অধিকার স্বীকৃত হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা এক রিটে তুরাগ নদীর অবৈধ দখলদারদের নাম ও স্থাপনার তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছিল বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি।
ওই তদন্ত কমিটির দেয়া তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পরে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বুধবার রায় ঘোষণা শুরু করেন।
বুধবার রায়ে হাইকোর্ট বলেন: ‘অবৈধ দখলদারদের দ্বারা প্রতিনিয়তই দেশের কম-বেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদী। নাব্যতা ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সঙ্কটে পড়তে বাধ্য। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদীকে লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’
আদালত আরো বলেন: ‘মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় ইতোপূর্বে আদালত নানা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেসব রায়ের নির্দেশনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তা নেওয়া হলে তুরাগ নদী রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হত না। শুধু যে তুরাগ নদী আক্রান্ত তা নয়, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদী অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত।’
রায়ের বিষয়ে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বুধবার বলেন: ‘আদালত আজ রায়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা, লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মত দেশের নদ-নদীর কিছু আইনি অধিকার স্বীকৃত হবে।’
এ আইনজীবী আরো বলেন: আমাদের দেশের নদ-নদীগুলো যাতে জীবন্ত ও প্রবাহমান থাকতে পারে তা নিশ্চিতে এ রায়ের মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে যাচ্ছে। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন নদী দখল কিংবা দূষণের সাহস না করে।