নিজস্ব প্রতিবেদক : জ্বিন হাসিলে ক্যান্সার থেকে শুরু করে সকল রোগের চিকিৎসা করানো হয়। দেওয়া হয় ঝাড়-ফুক, তেল পড়া, পানি পড়া। জ্বিন দিয়ে অপারেশনের কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। বিজ্ঞানের এই আধুনিকতার যুগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামে চলছে এমন প্রতারণার রম রমা ব্যবসা।
জানা গেছে, জ্বিন হাসিলকারী মহিলার নাম সালেহা পারভীন খুশি (২৬) হলেও এলাকায় পরিচয় দেন মনোয়ারা খাতুন খুশি নামে। স্বামী মাসুদ রানা দালাল। সপ্তাহের শনি-রবি ও মঙ্গল-বুধ এই চারদিন রোগী দেখেন খুশি। প্রতি রোগির ফিস ১০০ টাকা। রোগের ধরণ অনুযায়ি জ্বিন দিয়ে অপারেশন করার ফি নেওয়া হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মোটা টাকার কমিশনে একাধিক দালাল চক্রের সদস্যকে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া, সাপ্তাহিক চুক্তিতে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের বশে রেখেছেন জ্বিন হাসিলকারি খুশি ও তার পরিবারের সদস্যরা। কোনো সাংবাদিক রিপোর্টের জন্য সেখানে তথ্য সংগ্রহে গেলেই খুশির পরিবারের লোকজন ছুটে এসে ওই সমস্ত নেতাদের কাছে ফোন ধরিয়ে দেন। নেতারা বিভিন্ন ধরণের কথা বলে রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ করে থাকেন। খুশির বর্তমান আয় সপ্তাহে দুই লক্ষ টাকারও বেশি।
এদিকে, খুশির এই প্রতারণার বিরুদ্ধে এলাকাবাসি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরে গণ-স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র প্রেরণ করেছেন। দরখাস্তে অর্থ আদায়করাসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে জানানো হয়েছে, খুশি তিন বছর আগে যশোরের শার্শা থানার বাগআঁচড়ার কোটা গ্রামে তার বাবার বাড়িতে জ্বিন হাসিলের নামে প্রতারণার এই ব্যবসা চালু করে। কিন্তু ওই এলাকার সচেতন ব্যক্তিবর্গ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। খুশির স্বামী মাসুদ রানা মাদকাসক্ত উল্লেখ করে দরখাস্তে আরো বলা হয়েছে, চিকিৎসার নামে খুশির বাড়িতে গভীর রাতে সুন্দরী মহিলাদের অজ্ঞান করে রাখা হয়। এসময় রোগীর কোনো স্বজনদের সেখানে রাখা হয় না। সচেতন এলাকাবাসী বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতারকচক্র, ভন্ড কবিরাজের কবল থেকে নিরীহ লোকজনদের রক্ষা করার আহবান জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে কথিত জ্বিন হাসিলকারি কবিরাজ খুশির বাড়িতে যাওয়া হলে তার শাশুড়ি ও ননদ দেখা করার আপত্তি জানিয়ে এলাকার দুইজন আওয়ামীলীগ নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদের সাথে কথা বলুন। এমনকি খুশির স্বামী মাসুদ রানার সাথেও তারা দেখা বা কথা বলতে না দিয়ে এ প্রতিনিধিকে রিপোর্ট না করার জন্য টাকা দিয়ে ম্যানেজ করারও ব্যর্থ চেষ্টা করেন ।