রাজনীতির খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বাতিল চেয়ে ঢাকাসহ আটটি বিভাগের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ৭৪টি মামলা করেছেন।
আবেদনে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ঘোষণা, নির্বাচনে যিনি বিজয়ী হয়ে আসছেন তাকে বাতিল ঘোষণা এবং অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
গত সোমবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৭৪টি মামলা করেছেন বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। এ ছাড়া আরো কয়েকটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে প্রার্থীদের প্যানেল আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ‘বিকেল ৬টা পর্যন্ত ৭৪টি আবেদন দায়ের করা হয়েছে।’
এহসানুর রহমান বলেন, ‘আমি মেহেরপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মাসুদ অরুনের পক্ষে আবেদন জমা দিয়েছি। এসব আবেদনের মাধ্যমে নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে সে বিষয়ে আমরা আদালতে উপস্থাপন করব।’
আবেদনগুলোতে কী বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মতো ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। নির্বাচনের আগের রাতে প্রায় ৮০ ভাগ ভোটের বাক্স পূরণ করে রাখা হয়। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট গ্রহণ হয়েছে; যা হাস্যকর। তিনি বলেন,অনেক কেন্দ্রে মৃতলোক ভোট দিয়ে গেছে এ ধরনের তথ্য রয়েছে।
প্রথমে গত সোমবার মামলা করেন ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও টাঙ্গাইল-৭ আসনে বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।
এরপর গতকাল বুধবার হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির আরো পাঁচজন। তাঁরা হলেন বরিশাল-১ আসনের জহির উদ্দিন স্বপন, গাজীপুর-৪ আসনের শাহ রিয়াজুল হান্নান, মৌলভীবাজারের-৩ আসনের নাসের রহমান, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের আবদুল হাই ও ভোলা-২ আসনের মো. হাফিজ ইব্রাহিম।
আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৬৬ জন প্রার্থী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-৬ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৭ আসনের মোস্তফা মোহসিন মন্টু, ঢাকা-১৯ আসনের বিএনপির প্রার্থী ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের প্রার্থী আসভিরুল ইসলাম, লালমনিরহাট-১ আসনের হাসান রাজীব প্রবীন, দিনাজপুর-৪ আসনের আখতারুজ্জামান মিয়া, দিনাজপুর-২ আসনের মো. সাদিক রিয়াজ, রংপুর-৬ আসনের সাইদুল ইসলাম ও গাইবান্ধা-৫ আসনের মো. ফারুক আলম সরকার। এসব আবেদনে নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে আবারও ভোটের দাবিতে বিএনপি, গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য প্রার্থীরা হাইকোর্টে এই মামলা করেন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিএনপির আইনজীবীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে এসব মামলা পরিচালনা করার জন্য আইনজীবীদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হয়েছে। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে ভাগ করে মামলাগুলো পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ২৮৬টি এবং বিরোধীপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র আটটি আসন।
ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেছে এবং পুনরায় নির্বাচনের দাবি তুলে শপথ গ্রহণ করেনি। তাঁরা সংসদের যাবেন না বলে জানিয়েছেন। এরপর বিএনপি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে।