বিদেশের খবর: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও কমপক্ষে ৫০ জন। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেনটন হ্যারিসন ট্যারেন্ট নামের এক ব্যক্তি এই হামলা চালান।
শুধু তাই নয়, হামলার ঘটনা ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিম করেন ওই সন্ত্রাসী। প্রথমে হামলা চালান আল নূর মসজিদে। সেখানে ব্যাপক হতাযজ্ঞ চালানোর পর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে লিনউড মসজিদে গিয়ে হামলা চালান তিনি।
সোমবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি তুলে ধরেছেন যে কিভাবে তিনি এই হামলা চালিয়েছেন এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ট্যারেন্ট একাধিক সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র নিয়ে প্রথমে আল নূর মসজিদের ভেতরে থাকা পুরুষ, নারী ও ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়েন। এই হামলাকারী যখন আল নূরের পশ্চিম দিকের একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে পৌঁছান, তখন তার মাথায় থাকা ক্যামেরাটি চালু হয়।
মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছে ডিনস অ্যাভিনিউয়ের সামনে তার গাড়িট পার্ক করেন। এরপর তিনি গাড়ি থেকে নেমে এটির বুট থেকে একটি অস্ত্র বের করে মসজিদের দিকে হেঁটে যান। স্থানীয় সময় অনুযায়ী দুপুর একটা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি নামাজরত মুসলিমদের ওপর গুলি ছোড়া শুরু করেন।
ছয় মিনিট পর তিনি ডিনস অ্যাভিনিউ থেকে গাড়ি নিয়ে বোটানিক গার্ডেনস হয়ে বিলে অ্যাভিনিউয়ের দিকে রওনা হয়। এসময় তার মাথার ক্যামেরাটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্বিতীয় হামলাটি হয় বেশ কিছুক্ষণ পর শহরটির কেন্দ্র থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত লিনউড মসজিদে।
প্রায় একটা ৫৫ মিনিটের দিকে অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত ট্যারেন্ট তার গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রীকে গুলি করেন। কার পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মেদ অখিল উদ্দিন জানান, বন্দুকধারী প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকেন। কিন্তু কোনও দরজা খুঁজে না পেয়ে জানালার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন।
নামাজ পড়তে আসা আব্দুল আজিজ গুলির শব্দ শোনার পর একটি ক্রেডিট কার্ড রিডার বন্দুকের মতো করে হাতে ধরে বেরিয়ে আসেন। তিনি এটি হামলাকারী ট্যারেন্টের দিকে ছোড়েন। হামলাকারীও তার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন। এরপর হামলাকারী তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন।
৪৮ বছর বয়সী আজিজ জানান, তিনি হামলাকারীকে ভেতরে ঢুকতে দিতে চাননি। হামলাকারীর ফেলে দেয়া একটি খালি বন্দুক হাতে নিয়ে তাকে অনুসরণ করেন আজিজ। তিনি বলেন, যখন হামলাকারী আমার হাতে বন্দুক দেখলেন, তখন তিনি তার হাতের বন্দুকটি ফেলে দিয়ে গাড়ির দিকে ছুটে যেতে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, এসময় আমি তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করি। তিনি তার গাড়িতে গিয়ে বসেন এবং আমি আমার হাতের বন্দুকটি একটি তীরের মতো তার জানালার দিকে ছুড়ি।
এরপর দুজন পুলিশ তাকে প্রতিহত এবং গ্রেফতার করেন। এই দুই পুলিশের মধ্যে শুধু একজনের হাতে একটি হ্যান্ডগান ছিল। প্রথম হামলার প্রায় ৩৬ মিনিট পর হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। ট্যারেন্টের গাড়িতে পাওয়া দুটি আইইডি(ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পরে নিষ্ক্রিয় করে সেনাবাহিনী।