বিশেষ ডেস্ক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৪০ শতাংশের অধিক ভোট পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল ও প্রতিবেদনে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে ভোট পাওয়ার হারও বেড়েছে দলটির। অথচ চলমান পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
বেশ কয়েকটি উপজেলায় ভোট পড়ার হার দেখলে যে কারোর মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও কি ভোটদানে আগ্রহ হারাচ্ছেন?
এ বিষয়ে দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের মন্তব্য, বিভিন্ন উপজেলায় ভোট কম পড়ায় নির্বাচনে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিরোধীদের অনুপস্থিতিই এর প্রধান কারণ। তবে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীরাই বিরোধীদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে, সারাদেশে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শাখায় আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা নেতাকর্মীরাও কি ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন না?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৬৪টি জেলা ও ১২টি মহানগর নিয়ে মোট ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে আওয়ামী লীগের। ৪৯০টি উপজেলা কমিটি, ৩২৩টি পৌরসভা ও চার হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন কমিটি এবং তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়নে ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলায় ৭৫ সদস্যের কমিটি, মহানগরে ৭৫ সদস্যের, মহানগরের ওয়ার্ডে ৭১ সদস্যের কমিটি, থানা/উপজেলায় ৭১ সদস্যের, পৌরসভায় ৬৯ সদস্যের, ইউনিয়নে ৬৯ সদস্যের এবং ওয়ার্ড বা ইউনিট পর্যায়ে ৫৫ সদস্যের কমিটি গঠন করতে হয়।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ওই নির্বাচনে ৩৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৪৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ওই নির্বাচনে ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬২টি আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৩০টি আসনে জয় লাভ করে দলটি। ওই নির্বাচনে ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৭টি নির্বাচনী এলাকায় ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পড়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ৭২ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ; ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকে আরও জানা যায়, চলমান পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নয় উপজেলায় ৩০ শতাংশের কম ভোট পড়ে। চার উপজেলায় ভোট পড়ে ৬০ শতাংশের বেশি। ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়ে ৩৮টি উপজেলায়। ৮৩টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীতপ্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। এর মধ্যে ৩১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৩৮টি উপজেলায় জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ১২৩টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে অন্তত ১০ উপজেলায় ভোট পড়ে ৩০ শতাংশের কম। ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়ে অধিকাংশ উপজেলায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ৫০ শতাংশের বেশি ভোট।
গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ৬৫টি উপজেলার অন্তত ৩৭টিতে ভোট পড়ে ৫০ শতাংশেরও কম। এসব উপজেলার মধ্যে ২৪টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীতপ্রার্থীই চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। বাকিগুলোতে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ৫০ শতাংশের অধিক ভোট পড়ে এমন নয় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন। ওই নির্বাচনের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৪২টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ২৩ উপজেলায় স্বতন্ত্র এবং ১৫টি উপজেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ মনোনীতরাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম ধাপে গড় ভোট পড়ে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। দুই কোটি ছয় লাখ ২৭ হাজার ৮৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দেন মাত্র ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫১২ জন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে ৩১.০৫ শতাংশ ভোট পড়ে। যা সংখ্যায় নয় লাখ ২৩ হাজার ২৬। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে ১৯ হাজার ৫১৩টি ভোট বাতিল হয়। এক হাজার ২৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে কোনো কেন্দ্রেরই ভোট স্থগিত হয়নি। ডিএনসিসি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি থাকলে সেটাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। আমরা যদি পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশের নির্বাচনের চিত্র দেখি, সেখানে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হলে অনেক ভোট হিসাব করা হয়। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনমুখী সেহেতু এখানে ভোট কাস্টিং একটু বেশি। সেই হিসাবে ৪৫ শতাংশ যথেষ্ট।’সূত্র: জাগোনিউজটোয়েন্টিফোর