বিদেশের খবর: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার হামলা করেছে। ওই হামলায় ছয়জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত বুধবার ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় গ্রামের রোহিঙ্গা বাসিন্দারা বাঁশ কাটার কাজ করছিলেন।
গ্রামবাসী ও রাখাইনের বুথিডংয়ের সংসদ সদস্য মং কিয়াও জ্যান রয়টার্সকে পাঁচজন নিহত ও ১৩ জন আহতের কথা জানান। তবে এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন জানিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দাবি করে। সেনাবাহিনীর দাবি, নিহত রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। আহতের সংখ্যা নয়জন বলে উল্লেখ করেছে তারা।
আজ শুক্রবার সেনাবাহিনী প্রকাশিত দৈনিক মিয়াওয়াদি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, বুধবার সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। হামলার সময় রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ছিল।
অন্যদিকে, বৌদ্ধদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির মুখপাত্র খিন তু খ নিহত ও আহতদের কেউ তাদের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী তো সবর্ত্রই বোমা ফেলছে।’
রাখাইনের বুথিডংয়ের কিন তং গ্রামের জাকির আহমেদ নামের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গতকাল বিকেল ৪টার দিকে এক সেনা হেলিকপ্টারের চালানো হামলায় আমাদের গ্রামের একজনসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছে।’ ওই গ্রামের লোকজন ভয়ে কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রসের মিয়ানমার দলের প্রধান স্টেফান সাকালিয়ান জানান, তাঁদের সংস্থার প্রতিনিধিরা বুথিডংয়ের হাসপাতাল পরিদর্শন করে ১৩ জনকে জখম নিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখেছেন। কয়েকজনের জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
সাই দিন উপত্যকার রশিদ আহমেদ নামের এক শ্রমিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাঁর বড় ভাই, চাচা ও ভাতিজা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি জানান, তাঁরা একসঙ্গে বাঁশ কাটছিলেন। ওই সময় একটি হেলিকপ্টার থেকে তাঁদের ওপর গুলি ছোড়া হয়।
বুথিডংয়ের সাংসদ মং কিয়াও জ্যান বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার পথে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। মোট পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইন মূলত ২০১৭ সালে বিশ্বমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
তবে এখনো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ হয়নি। গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়েছে।
জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে ‘গণহত্যার চেষ্টা’ ছিল বলে জানিয়েছে। সম্প্রতি রাখাইনে অপর একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেটি হচ্ছে রাখাইনের বুদ্ধদের ‘আরাকান আর্মি’।