শিক্ষা সংবাদ: ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৭টা ৩০ মিনিট। স্কুলের একটি কক্ষে আলো জ্বলছিল, সেখান থেকেই নৃত্যের তালে তালে হিন্দি গানের কড়া আওয়াজ ভেসে আসছিল।
সোমবার রাতের এই আসরে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ছাড়াও ছিলেন স্থানীয় দু’জন শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুলশিক্ষকরা। বোঝা যাচ্ছিল না কী হচ্ছে, কেনই বা এই আসর।
ভেতরে ঢোকার পর দেখা গেল নৃত্য আর গানের তালে তালে মাতোয়ারা সবাই। পরে জানা গেল পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইনের চিত্তবিনোদনের জন্য এই আয়োজন! টানা দুই ঘণ্টা চলার পর ইউএনওর হস্তক্ষেপে ৯টায় থামেন তারা। পরে চলে ভূরিভোজ।
জানা যায়, হঠাৎ শিক্ষা কর্মকর্তার জন্যই তড়িঘড়ি করে ছাত্রীদের নিয়ে আসা হয়েছে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ কাণ্ড নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে।
আসরে আর যারা ছিলেন তাতের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন ও প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়ন আ’লীগের সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টুক।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার এসেছেন। তাই কয়েকটা মেয়েছেলে সাংস্কৃতিক গানটান গাইছে। তাও একটা রুমের মধ্যে। বাহিরেও না, রুমের ভেতরে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘নতুন একটা মাদরাসা হয়েছে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেটা পরিদর্শনে গেছেন।
পরে রাতে মৌডুবি স্কুলে অবস্থান করেছেন। ওই স্কুলে ২৬ মার্চ উদযাপন করছে, কিন্তু পুরস্কার বিতরণ করা হয়নি। তাই ওই স্কুলের শিক্ষকরা স্যারকে পুরস্কার বিতরণের জন্য বলেছে।
সেই সঙ্গে তাদের ছেলেমেয়েরা নাচ ও গান শোনাবে বলছে।’ এর আগে দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকদের ত্রৈমাসিক সভা ও দুদকের সততা সংঘের সভার আয়োজন করা হয়।
সেখানে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর প্রধান অতিথি ছিলেন। রাত ৭টা ১০ মিনিটে তিনি নৈশভোজ ও রাত্রিযাপনের জন্য উপজেলা সদর থেকে ২০ কিমি. দূরে মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান।
পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর তাকে সেখানে নিয়ে যান। তাকে খুশি করতেই তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক আশপাশের ছাত্রছাত্রীদের জরুরি ভিত্তিতে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন।
পরে রাত ৯ টায় অনুষ্ঠান শেষ করে তারা ভোজে অংশ নেন। তার জন্য স্কুলেই রাতযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবকরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পুরো ঘটনাটি এলাকাবাসীর কাছে দৃষ্টিকটু। স্থানীয় চিত্রশিল্পী শাহ আলম বলেন, ‘অফিসারকে খুশি করতে এভাবে রাতের বেলায় ছাত্রীদের দিয়ে নাচগান করানো ঠিক হয়নি। এটা আমাদের কালচার নয়।’
রাতে দরজা বন্ধ করে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘না, কোনো প্রোগ্রাম ছিল না।’ প্রতিবেদকের কাছে ভিডিও রয়েছে- উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এটা ওখানকার স্থানীয় বাচ্চা, ওরা নিজেরা একটু করছে। কোনো সমস্যা আছে?
স্কুলে রাতের বেলায় কক্ষের মধ্যে হলে সমস্যা কি? বেআইনি কিছু হয়েছে কিনা? আয়োজন আমি করিনি। এটা প্রতিষ্ঠান করছে। প্রতিষ্ঠানকে জিজ্ঞেস করেন। প্রতিষ্ঠানের ছেলেপেলে করেছে, আমি ওদের দু-একটা উপদেশ বাণী দিয়েছি।’ এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ওই আয়োজন বন্ধের জন্য বলেছি, সে অনুযায়ী আয়োজনটি বন্ধ করা হয়। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানব।’