মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি : আম আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির একটি অন্যতম উৎস। কিন্তু আশাশুনি উপজেলার একশ্রেণীর মধ্যসত্ত্বভোগী, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আম পাকিয়ে খাদ্যমান বিনষ্ট করছে। হরহামেশা হরমোন, ফরমালিন ও ক্যালসিয়াম কার্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম পাকিয়ে যাচ্ছেন। এতে ক্রেতাসাধারণ ও ভোক্তা প্রতারিত হয়ে আর্থিক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরণের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা আম বা যে কোন ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয়। কেমিক্যাল মিশ্রিত আম খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হন। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কার্বাইড বিক্রিয়ায় আমকে কাঁচা থেকে পাকা অবস্থায় নিয়ে আসে। আমটি কাঁচা, কিংবা আধা পাকা অবস্থায় থাকুক না কেন এতে কেমিক্যালের প্রভাব এতটাই ঘটে যে, ভেতরে বাইরে ফলটির রঙে ও স্বাদে স্বাভাবিকভাবে পাকা ফলের মতো হয়ে যায়। স্বাভাবিক পাকা আমের মতো দৃষ্টি নন্দন টকটকে লাল, হলুদ, গোলাপি বর্ণ দেখে মানুষ আগ্রহ করে এসব কৃত্রিমভাবে পাকানো আম পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তিনি হয়তো জানেন না যে, তিনি টাকা দিয়ে বিষ কিনলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এধরনের কাজ প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলার বুধহাটা, আশাশুনি সদর, কাদাকাটি, বড়দল, গোয়ালডাঙ্গা সহ বিভিন্ন হাট-বাজর ঘুরে দেখা দেখা গেছে, বাজারে হিমসাগর, ন্যাংড়া, গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২৪ শ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের নজর কাড়তে ঝুড়ির উপর রাখা হয়েছে অল্প কিছু পরিপক্ক আম। আর ঝুড়ির তলার দিকে রয়েছে অপরিপক্ক ক্যামিক্যাল মিশ্রিত আম। খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার আগেই এসব আম বাজারজাত করা হচ্ছে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশায় এমনটি জানিয়েছেন কয়েকজন আম ব্যবসায়ী। কিন্তু অন্য কিছু ব্যবসায়ীরা বলেন, শুধু বেশি মুনাফা নয়, এবার ঝড়-বৃষ্টি বেশি হওয়ায় গাছে আম রাখাটা নিরাপদ মনে হচ্ছে না। যে কারণে একটু আগেই তা বাজারে তোলা হচ্ছে। তাদের দাবী এসব আম খাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন হয়েছে। সচেতন মহল মনে করেন, সাতক্ষীরার আমের সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। এমনকি বিদেশেও। সুনাম ধরে রাখতে ও ভোক্তার অধিকার ক্ষুন্ন করে আম পাকাতে কেউ কার্বাইডের আশ্রয় নিলে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করা হোক।