তরিকুল ইসলাম লাভলু : যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক একাডেমিক স্বীকৃত সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলাধীন নলতা শরীফের ঐতিহ্যবাহী কে বি আহ্ছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুল (প্রাক্তন প্রি-ক্যাডেট স্কুল) ২০১৬ সালে ৫ম শ্রেণি সমাপনী ও ৮ম শ্রেণি জেএসসি’র পর ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজের ৭ম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবছর ৭ম শ্রেণি ক্যাডেটের ভর্তির জন্য খুলনা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭ জন শিক্ষার্থী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৭ জন এবং লিখিত ও ঢাকায় মৌখিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চূডান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪ জন শিক্ষার্থী। সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ অত্র প্রতিষ্ঠানের ক্যাডেট শাখার কৃতি শিক্ষার্থীরা হলো- লুবাইয়া তাহেরিমা (২০২২০০২২) ময়মনসিংহ গার্লস্ ক্যাডেট কলেজ, সাহারিনা জাহান (২০২২০০২৩) জয়পুরহাট গার্লস্ ক্যাডেট কলেজ, প্রতীতি মন্ডল তিশা (২০২২০০২৪) জয়পুরহাট গার্লস্ ক্যাডেট কলেজ ও ইয়াছিন জুলকার নাঈম (১০২২০০৬২) ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ।
প্রতিষ্ঠানের ক্যাডেট শাখার সাফল্য সহ সার্বিক সাফল্য নিয়ে ৭ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির বিভিন্ন কর্মকতাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন নলতা শরীফের কে বি আহ্ছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুলের সফল প্রধান শিক্ষক শ্রীকুমার বসাক। মতবিনিময়কালে তিনি জানান, নিবেদিত ব্যক্তিবর্গের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে হাটি হাটি পা পা করে যাত্রা শুরু করে। সেখান থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একঝাক কঠোর তত্ত্বাবধান, দক্ষ শিক্ষকম-লীর অক্লান্ত পরিশ্রম, শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা ও শৃঙ্খলাবোধ এবং অভিভাবকদের সচেতনতাবোধের কারণে অভ্যন্তরীণ ও পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির নানা ধরনের সাফল্য অর্জিত হলেও ২০১৬ সালে ৫ম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষায় ৮১ জন পরীক্ষা দিয়ে ৭০ এ+ ও ১১ জন এ গ্রেডের পাশাপাশি শতভাগ পাশ করে। ৮ম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষায় ৭৪ জন পরীক্ষা দিয়ে ৭০ জন এ+ ও ৪ জন এ গ্রেডসহ শতভাগ পাশের পর ২০১৭ সালে ৭ম শ্রেণির ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৭ জন পাশের পাশাপাশি চূড়ান্তভাবে এবছর সর্বোচ্চ ৪ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনা ছিল অভাবনীয়।
সাম্প্রতিক ৩টি সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিগত ২২ বছরের রেকর্ড ভাঙায় সকল মহল থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদের পাশপাশি সাফল্যজনিত সোনালী বছর হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি পিছিয়ে নেই। ২০০৫ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শামিম আরা রুম্পা নতুন কুঁড়িতে একক অভিনয় প্রতিযোগিতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। যে কারণে স্থানীয়সহ কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, দেবহাটা, আশাশুনি, সাতক্ষীরা সদর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে প্রতিবছর অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তার সন্তান, ব্যবসায়ীর সন্তান কষ্ট স্বীকার করে হলেও মানস্ম¥ত শিক্ষার জন্য নলতা শরীফের এই প্রতিষ্ঠানটিতে ভিড় জমাচ্ছেন। কোনো কোনো অভিভাবক নলতায় বাসা ভাড়া নিয়ে দূরবর্তী বিভিন্ন স্থানে অফিস করছেন। আবার দেবহাটার বর্তমান ইউএনও’র সন্তানের মত অনেকেই নিজ ব্যবস্থাপনায় সন্তানকে স্কুলে আনা নেওয়া করছেন। তাই বিত্তবানদের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে অত্র প্রতিষ্ঠানটিকে অবকাঠমো উন্নয়নসহ সকল বিষয়ে বর্তমান জেলার সর্বোচ্চ সাফল্য টপকিয়ে অচিরেই বিভাগসহ দেশের মধ্যে অনন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে অন্যান্যদের মতো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও মনে করেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট