আসাদুজ্জামান: সাতক্ষীরায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন সড়ক ও মহাসড়কগুলোর ছাল চামড়া উঠে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তার উপর পানি জমে থাকা ও ঠিকাদারী কাজে ব্যাপক পুকুর চুরি ও অনিয়মের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় সড়ক-মহাসড়কগুলোর অবস্থা বেহাল থাকে। আর এ বেহাল দশার কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হচ্ছে এ সব পথে যাতায়াত করে। অন্যদিকে শীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা কোটি কোটি টাকা দামের এসি গাড়িতে যেগ দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানেÑ বক্তৃতা দান, পুরস্কার বিতরণ আর উদ্বোধন করে শেষ হচ্ছে তাদের উপর অর্পিত গুরু দায়িত্ব! জেলার ২২ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন যে অবর্ণনীয় ঝাঁকুনি আরা ব্যাথা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই হুমান আজাদের ভাষায়Ñ উন্নতি তথা উপরের দিকে পতন হওয়া এসব জনপ্রতিনিধিদের।
সম্প্রতি বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এসেছিলেন সাতক্ষীরায়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন যশোর বিমানবন্দর থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত আসতে তিনি যে ভোগান্তি রাস্তার দুরাবস্থার কারণে সয়েছেন তা সহ্য করে কোন ট্যুরিস্ট এখানে আসতে চাইবেন না!
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা-খুলনা ও সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কসহ পৌর এলাকা এবং বিভিন্ন উপজেলার সড়ক-মহাসড়কগুলো দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের অভাবে যান চলাচলে একেবারেই অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। কোন কোন সড়কের কার্পেটিং, ঝিল ও পাথর উঠে, বৃষ্টির পানিতে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো বর্তমানে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও যত্র-তত্র যানবাহন বিকল হয়ে পড়ায় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এ সব সড়ক-মহাসড়কে। বৃষ্টি হলেই এ সব সড়কে কাদা ও হাঁটু পানি থাকে, আর রোদ্র হলেই ধুলোয় সাধারণ মানুষের পাশাপশি স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের পোষাক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঠিকাদারী কাজে ব্যাপক অনিয়মের কারণে মেরামতের ৩ থেকে ৬ মাস যেতে না যেতেই রাস্তার বেহাল দশায় পরিণত হয়।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর থেকে খুলনা এবং সাতক্ষীরা থেকে যশোর মহাসড়ক অন্যতম। ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাকসহ হাজার হাজার বাস-ট্রাক-পিক আপ চলাচল করে এ মহাসড়কে। বর্তমানে যানবাহনের চাপ আরো বেড়েছে। তবে নির্মাণের ছয় মাস যেতে না যেতেই সাতক্ষীরা শহর থেকে মেডিকেল কলেজ, নিউমার্কেট থেকে চায়না-বাংলা মোড়, হাসপাতাল মোড়, বাস টার্মিনাল ও বিজিবি হেড কোয়ার্টার্স হয়ে তালতলা পর্যন্ত ৭ কিঃমিঃ রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানা খন্দে ভরা মহাসড়কের এইসব অংশটি সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগের অন্ত নেই পথচারীদের। এছাড়া সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক, সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকজন ড্রাইভারসহ সাধারণ মানুষ জানান, সাতক্ষীরা- খুলনা মহাসড়কের সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস গেট থেকে শুরু করে বিনেরপোতা পর্যন্ত সড়কের উপর ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত তালতলা বিজিবি হেডকোয়ার্টারের সামনে বিভিন্ন সময় খাদে পড়ে যানবহন বিকল হয়ে পড়ে। বিজিবি হেডকোয়ার্টারের সামনে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ওই সড়কে বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।
সম্প্রতি একটি যাত্রীবাহি বাস সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলগেট সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে সড়কের উপর খাদে পড়ে বিকল হয়ে যায়। যাত্রীবাহি ওই বাস বিকল হয়ে পড়লে এক ঘণ্টা যাবত সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে, মিলগেট থেকে তালতলা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সাতক্ষীরা থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট যেয়ে ওই যানজট নিরসন করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ছয় মাস আগে নির্মাণকৃত এ মহাসড়কটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মুল কারণ ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর যৌথ দুর্নীতি। আর রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের কমিশন দিতে দিতে ঠিকাদারদের যথাযতভাবে কাজ করা সম্ভব হয়না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান।
অন্যদিকে জেলার সংসদ সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা সড়ক ও জনপথ এবং স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের নির্মাণ কাজের মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ দৃঢ়তা দেখাতে না পারলে নি¤œমানের নির্মাণ কাজের কারণে জেলাবাসীর কষ্টের বিশেষ লাঘব হবে না বলে মনে করেন সচেতন সাতক্ষীরাবাসী।
অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় এ জেলায় ভাঙাচোরা সড়কগুলো অবিলম্বে টেকসইভাবে নির্মাণের দাবি জেলাবাসীর।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মঞ্জুরুল করিম মহাসড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে জানান, ইতিমধ্যে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। টেন্ডাারও হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ভাঙা চুরা রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি আরো জানান। কিন্তু মানুষ ১৬ কোটি টাকার বরাদ্দ আর বিল ভাউচার নয়, মানসম্পন্ন কাজ দেখতে চায়। সরকারের সুনাম অক্ষুণœ রাখতে কাজের সঠিক মান নিশ্চিত করাও জরুরি বলে মনে করেন তারা।