দেশের খবর: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তার আইনজীবীদের হট্টগোলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেছেন– ‘বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার। আদালতে এ রকম (আদালতে বিশৃঙ্থলা) নজির আর দেখিনি। আমরা কাগজ দেখে বিচার করব। কে কী বলল, তা দেখব না।’
বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অবস্থান করা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ। এ সময় মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার আরও কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা বাকি আছে। এ জন্য দুই সপ্তাহ সময় চান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
এর বিরোধিতা করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থার একটা প্রতিবেদন আমাদের হাতে আনঅফিশিয়ালি রয়েছে। আপনি সেটি দেখেন। মেডিকেল রিপোর্ট আসার আগেও আপনি জামিন দিতে পারেন।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘দুটি রিপোর্টের ওপর আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনানি করব। এ জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ওই দিনই খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি করা হবে বলে আপিল বিভাগ আদেশ দেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আজই শুনানি করার দাবিতে আদালতে হট্টগোল শুরু করেন। এর প্রতিবাদ জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আদালতের ভেতরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি এজলাসেই বসা ছিলেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলতে থাকেন, ‘জামিন না নিয়ে আমরা এজলাস ত্যাগ করব না।’ ওই সময় তারা বিচারকক্ষে বসে পড়েন। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে খাসকামরায় চলে যান। এর পরও আইনজীবীরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এর পর আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বর নতুন দিন নির্ধারণ করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ আওয়ামী লীগপন্থী অন্য আইনজীবীরা কিছুক্ষণ এজলাসকক্ষে বসা ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে তারা এজলাস ছেড়ে চলে যান।
বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারপতিরা। তারা অন্য মামলার শুনানি করতে চাইলে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি গ্রহণ করার দাবি জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের মামলার তারিখ হয়ে গেছে, আপনারা চলে যান।’
আইনজীবীরা বলেন, ‘রোববার শুনানি করেন।’
পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বাড়াবাড়ির সীমা থাকা দরকার। এ ধরনের নজির আর দেখিনি। আমরা কাগজ দেখে বিচার করব। কে কী বলল, তা দেখব না।’
এর পর শুরু হয় হইচই। বর্তমানে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বসে আছেন বিচারপতিরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ-সংক্রান্ত শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, খালেদা জিয়ার আরও কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা বাকি আছে। এ জন্য দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।
এর পর আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে এ মামলার শুনানির সময় গত ২৮ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে তার বিষয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আজকের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ডকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ দিনই আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন আদালত। সেই পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখা হয়। সেই মোতাবেক আজ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল।
খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিনের শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মমতাজউদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রায়ের পর ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন খালেদা জিয়া।