ডেস্ক রিপোর্ট : আজ পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ। পুরনো সব জীর্ণকে ফেলে নতুন দিন, নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন বাঙালির চোখে। আঁধার কেটে যাক, আসুক আলো, হিংসা-বিদ্বেষ শেষ হয়ে যাক বৈশাখের উৎসবের আনন্দে।
ওই বুঝি কালবৈশাখী/সন্ধ্যা-আকাশ দেয় ঢাকি/ভয় কী রে তোর ভয় কারে, দ্বার খুলে দিস চার ধারে। চার ধারে যত দ্বার যত জানালা সব আজ খোলা। বাঙালির উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল আলোয় অগ্নিবাণে পুড়ছে অন্ধকার। এসো এসো উৎসস্রোতে গূঢ় অন্ধকার হতে/এসো হে নির্মল কলকল্ ছলছল্ৃ। সত্য সুন্দর নির্মল দিন এসেছে। উগ্রবাদ ধর্মান্ধতা ধর্মের রাজনীতি এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে শেকড়ের শক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে বৈশাখ। আজ শুক্রবার ১৪২৪ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। বর্ষবরণ নয় শুধু, বাঙালির অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক জাগরণের উৎসবে যোগ দেবে সারাদেশ। এবার প্রথমবারের মতো সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজার সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো/নির্বাণহীন নির্মল আলো। অফুরান এই আলোয় উদ্ভাসিত হবে বাঙালি।
বছরের প্রথম দিনে আজ নতুন নতুন স্বপ্ন বুনবে বাংলার কৃষক। হালখাতা খুলবে ব্যবসায়ীরা। সরাকারি ছুটির দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে একযোগে চলবে লোকজ ঐতিহ্যের নানা উৎসব অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষের এই সূচনালগ্নে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈশাখ এবার এমন একসময়ে এসেছে যখন ধমান্ধ উগ্র মৌলবাদীরা পুনর্বাসিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে অনগ্রসর কূপম-ূক গোষ্ঠী। যখন বর্বর আক্রমণের শিকার হচ্ছে সুন্দরের চর্চা, মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার ফতোয়া দেয়া হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রান্ত বর্ষবরণের প্রাক প্রস্তুতি দেয়ালচিত্র যখন ভাস্কর্যকে মূর্তি জ্ঞান করে অপসারণের আবদার করা হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকে আনা হচ্ছে অপরিণামদর্শী পরিবর্তন, তখন নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে বৈশাখ। এ বৈশাখ জোট বাঁধারÑ প্রতিবাদের প্রতিরোধের। লোক ঐতিহ্যের প্রধান শক্তি অসাম্প্রদায়িকতা মানবিক মূল্যবোধ সাম্য সুন্দর শান্তির বাণী নিয়ে এসেছে বৈশাখ। আজ হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আলোয় নতুন করে জ্বলে উঠবে বাঙালি। অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা গ্রহণ করবে। দ্রোহের আগুনে শাণিত হবে। বাঙালির চেতনাবিরোধী অপশক্তি রুখতে নতুন বছরে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে বাংলাদেশ।
বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তার আমলেই প্রবর্তন হয় বাংলা সাল। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। বঙ্গাব্দের মাস হিসেবে বৈশাখের প্রথম স্থান অধিকার করার ইতিহাসটি বেশি দিনের না হলেও, আদি সাহিত্যে বৈশাখের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। দক্ষের ২৭ কন্যার মধ্যে অনন্য সুন্দরী অথচ খরতাপময় মেজাজসম্পন্ন একজনের নাম বিশাখা। এই বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারেই বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখের নামকরণ। বৈদিক যুগে সৌরমতে বৎসর গণনার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। সেখানেও সন্ধান মেলে বৈশাখের।
পূর্ববর্তী পোস্ট