বিদেশের খবর: দিল্লির ‘মারকাজ নিজামুদ্দিনে’ তাবলিগ জামাতের সমাবেশে অংশ নেওয়া ১২ বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ। এদের মধ্যে দুজন ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবেও শনাক্ত হয়েছেন। এই বাংলাদেশি নাগরিকরা সবাই ভারতে করোনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত দিল্লির তাবলিগ সমাবেশে অংশ নেন। পরে তারা সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘চিল্লা’ বা ধর্মীয় প্রচারে বেরিয়েছিলেন। তারা ওই রাজ্যের শামলি জেলার একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শামলি পুলিশ তাদের সেই মসজিদ থেকে তুলে নিয়ে এখন একটি সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে আটক রেখেছে।
এদিকে মহারাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) নেতা রাজ ঠাকরে ভারতে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য সরাসরি তাবলিগ কর্মীদের আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মতে এদের সোজা গুলি করে মারা উচিত। এমনকি এই অসভ্য লোকগুলোকে কোনও চিকিৎসাও দেওয়াও উচিত না!’
তাবলিগ জামাত সদস্যদের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে যে বিদ্বেষের ঝড় বইছে এবং সার্বিকভাবে একটা ‘ইসলামোফোবিয়া’র পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে যথারীতি আরও ইন্ধন জুগিয়েছে রাজ ঠাকরের এই মন্তব্য। তাবলিগের সমাবেশে বাংলাদেশসহ বহু বিদেশি রাষ্ট্রের মুসলিমরাও শামিল হয়েছিলেন, সেটা জানাজানি হওয়ার পর মুসলিমদের প্রতি আক্রমণের বহর আরও বেড়েছে।
শামলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার শ্রীবাস্তব এদিন (রবিবার) সকালে জানান, ‘আমরা যে ডজনখানেক বাংলাদেশিকে আটক করেছি তারা সবাই ভাসিন গ্রামে তাবলিগের একটি মসজিদে লুকিয়ে ছিলেন। তাদের অনেকের মধ্যেই জ্বর-কাশি বা করোনাভাইরাসের মতো উপসর্গও ছিল।’
‘শুক্রবার সন্ধ্যায় এদের দুজনের পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। এদের সবাইকেই গত তিন-চারদিন ধরে থানা ভাওয়ান শহরের সরকারি কলেজ বিল্ডিংয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।’
পুলিশ কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, আটক বাংলাদেশি নাগরিকরা সবাই পর্যটক ভিসা নিয়েই ভারতে ঢুকেছিলেন—এবং ভিসার শর্ত ভেঙে তারা ধর্মীয় প্রচারণা ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ। তাদের কারও ভিসার মেয়াদও এর মধ্যে ফুরিয়ে গেছে।
এই কারণেই আটক ১২ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে থানা ভাওয়ান পুলিশ স্টেশনে ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে আটক করা হয়েছে ভাসিন গ্রামের স্থানীয় দুজন বাসিন্দাকেও।
এদিকে দেশের নানা প্রান্ত থেকেই খবর আসছে, দিল্লির তাবলিগ জামাতফেরত ব্যক্তিরা করোনাভাইরাস মোকাবিলার চেষ্টায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছেন। কোথাও কোথাও তা সভ্যতা-ভব্যতার সীমাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আটক তাবলিগ সদস্যরা পুলিশকর্মীদের দিকে থুথু ছেটাচ্ছেন, নমুনা পরীক্ষার জন্য তাদের লালারস দিতে চাইছেন না—এমন বেশ কিছু ভিডিও ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের একটি সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন, সেখানে ভর্তি তাবলিগ সদস্যরা শুধু কর্মীদের গালিগালাজই করছেন না, তারা নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যাতে ওই ওয়ার্ডে মহিলা নার্সরা ঢুকতেই না পারেন।
এমনকি তারা বিড়ি-সিগারেট চেয়ে হাসপাতালের সাফাই কর্মীদের ওপরও জোরজবরদস্তি করছেন। এই ধরনের ‘বেয়াড়া’ তাবলিগ সদস্যদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করা হবে বলে উত্তরপ্রদেশের আদিত্যনাথ সরকার এর মধ্যেই ঘোষণা করেছে।
আর দেশজুড়ে এই তাবলিগবিরোধী আবহেই মহারাষ্ট্রের নেতা রাজ ঠাকরে (যিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের ভাইপো এবং বর্তমানে নিজের তৈরি দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান) তাবলিগ কর্মীদের বুলেট দিয়ে মারার নিদান দিয়েছেন। রাজ ঠাকরে বলেছেন, ‘দিল্লির মারকাজে যোগ দিয়ে যারা এখন সারা ভারতে ভাইরাস ছড়াচ্ছে, তাদের স্রেফ গুলি করে মারা উচিত।’ ‘আমি তো বলব তাদের চিকিৎসা পাওয়ারও কোনও হক নেই। এক্ষুনি বিশেষ আইন করে তাদের চিকিৎসাও বন্ধ করে দেওয়া উচিত’—মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের তাড়ানোর দাবিতে মুম্বাইতে এক বিশাল জনসমাবেশও করেছিলেন রাজ ঠাকরে।