ভিন্নরকম খবর : রাজশাহীর বাঘায় জহুরুল ইসলাম বাবলু নামের এক কলেজ শিক্ষক এখন গ্রিল মিস্ত্রির শ্রমিক। গত দুই মাস থেকে আড়ানী পৌর বাজারে মেসার্স জনতা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে গ্রিল মিস্ত্রির শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
জহুরুল ইসলাম বাবলু আড়ানী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আড়ানী সোনাহদ গ্রামের মৃত ছইরুদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে এবং পাঁচপাড়া আবদুর রহমান সরকার বিএম কলেজের কম্পিউটার অপারেশন বিষয়ের প্রভাষক।
তিনি ১৫ বছর চাকরি করেও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হয়ে বৃদ্ধ মাসহ ৭ সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে অবশেষে গ্রিল মিস্ত্রির শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম বাবলু ১৯৯৯ সালে রাজশাহী কলেজের দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন। তারপর তিনি কম্পিউটার বিষয়ে কোর্স করে ২০০৫ সালে বাঘা উপজেলার পাঁচপাড়া আবদুর রহমান সরকার বিএম কলেজের কম্পিউটার অপারেশন বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু কলেজটি সরকারিভাবে সব শর্তপূরণ করলেও ১৭ বছরে এমপিওভুক্ত হয়নি।
এ দিকে ৬ শতাংশ জমির ওপর দুটি ঘর তুলে বৃদ্ধ মা ও বোনের দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন জহুরুল ইসলাম বাবলু। তার বিবাহিত জীবনে স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। কিন্তু আর্থিক দীনতার কারণে স্ত্রী বর্তমানে পাশে নেই।
এর আগে বেতনবিহীন কলেজে চাকরির পাশাপাশি হাটবাজারে খাজনা আদায়ের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু করোনার কারণে হাটবাজার সঠিকভাবে না লাগায়, সে কাজটিও তার নেই। পরে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে বাল্যবন্ধু আড়ানী পৌর বাজারে মেসার্স জনতা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক নাজমুল হকের কাছে গ্রিলের কাজ শুরু করেন তিনি।
এ বিষয়ে জহুরুল ইসলাম বাবলু বলেন, চাকরি করি কিন্তু বেতন নেই। সংসার চালাতে খরচ হয়। কী করে সংসার চালাব এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে গ্রিলের কাজ করছি। তবে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে এ কাজ আর করা লাগবে না।
পাঁচপাড়া আবদুর রহমান সরকার বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সামরুল হোসেন বলেন, কলেজটি ২০০৩ সালে স্থাপিত। এই কলেজে ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও ৪৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কলেজ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের কিছু দিতে পারি না। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তার সংসারে সদস্যা সংখ্যাও বেশি। কোনো উপায় না পেয়ে শুনেছি জহুরুল ইসলাম বাবলু বাজারের এক দোকানে গ্রিলের কাজ করছে।
আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, জহুরুল ইসলাম এলাকায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। সে নির্বাচন করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার সংসারের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বিষয়টি জানার পর পরিষদ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু সংসারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় কুলিয়ে উঠতে পারে না। জানি বর্তমানে সে এক দোকানে গ্রিলের শ্রমিকের কাজ করছে।