কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা ব্যুরো: দেবহাটার খলিশাখালীতে অবস্থানরত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ও ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ ইস্যু নিয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তোলপাড় হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জবরদখলকৃত খলিশাখালীর ৪৩৯.২০ একর জমি ভূমিদস্যুদের কবল থেকে দখলমুক্ত করণের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়। এসময় দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন,
খলিশাখালী নামীয় ১৩২০ বিঘা ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমির মৎস্য ঘের গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে জবরদখল করে নেয় অস্ত্রধারী ভূমিদস্যুরা। দখল পরবর্তী ঘেরগুলো থেকে মাছ সহ অন্যান্য সম্পদ লুট করে ভূমিদস্যুরা। বর্তমানে জবরদখলকৃত প্রায় ৩শ মালিকের গোটা সম্পত্তি বেআইনীভাবে ভূমিদস্যুরা তাদের পৈত্রিক জমির মতো ভাগ বাটোয়ারা এবং বিক্রয় করে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের আলোকে তিনি বলেন,
খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যুরা অধিকাংশই বহিরাগত। সেখানে বর্তমানে বেশ কয়েকটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক বেচাকেনা, জুয়ার আসরসহ সব ধরনের অপকর্ম বর্তমানে খলিশাখালীতে সংঘটিত হচ্ছে। যেকোন মুহুর্তে সেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনী গুলো ক্রমশ উপজেলা জুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে দেবহাটাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। সেজন্য প্রতিদিন খলিশাখালীতে পুলিশের টহল অব্যহত থাকবে। নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী আরোও বলেন, ভূমিদস্যুরা দিনদিন যেন খলিশাখালীকে দেবহাটা থেকে বিচ্ছিন্ন আরেকটি আজব রাজ্য বানিয়ে ফেলছে। সেখানে আইনের শাসন কমে যাচ্ছে এবং দিনদিন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে সন্ত্রাসী বাহিনী ও ভূমিদস্যুরা। ইতোমধ্যেই খলিশাখালী থেকে ভূমিদস্যুদের চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে তাদেরকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন,
খলিশাখালীর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনী গুলোর মদদদাতাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। সভায় বক্তৃতাকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, খলিশাখালীর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা যেকোন মুহুর্তে দেবহাটা উপজেলাতে ২০১৩ সালের মতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য তাদের উচ্ছেদে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান বলেন, খলিশাখালী জনপদ দিনদিন সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও দাগী অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিনত হচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার আগেই তাদেরকে সমুলে উপড়ে ফেলতে হবে। ইতোমধ্যেই খলিশাখালীর ভূমিদস্যুরা পাশ্ববর্তী রাঙাশিষাসহ আরোও কয়েকটি এলাকা দখলে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে খলিশাখালী থেকে এসব ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করে গোটা সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের অনুকূলে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সভায় খলিশাখালীর দখলদারিত্বের মুল হোতা ও বহু মামলার আসামী ভূমিদস্যু আনারুল, রবিউল সহ অন্যান্য সন্ত্রাসীদের পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেন বক্তারা।
আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় খলিশাখালী ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল, গাঁজা, ভায়াগ্রা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানী পন্য পারাপার বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির ভূমিকা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিজিবির টহল জোরদারের অনুরোধ জানান নেতৃবৃন্দরা। পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে ইজারাকৃত কুলিয়া রেণু ও মৎস্য সেড থেকে বিক্রয়কৃত বিভিন্ন নদ-নদীর গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা পরীক্ষা নীরিক্ষা কিংবা কোন সুনির্দিষ্ট প্রমান ছাড়াই ‘ভারতীয়’ আখ্যা দিয়ে বিজিবি কর্তৃক জব্দ ও বিনষ্টের মধ্যদিয়ে বাজারের ইজারাদার, ব্যবসায়ী ও ঘের মালিকদের আর্থিক ক্ষতিসাধনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্তের রেজুলেশন করা হয়।