নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চার প্রভাষককে এমপিওভুক্তিকরণের মাধ্যমে ২০ লক্ষাধিক সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদসহ ৪ প্রভাষকের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বুধবার দূর্ণীতি দমন কমিশন দুদক এর প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাস প্রতিষ্ঠানটির খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের দেলবার মৃধার ছেলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো: মনিরুল ইসলাম,আশাশুনি উপজেলার নাকতাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ সরদারের ছেলে বর্তমানে শহরের রুসলপুরের বাসিন্দা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান,
সাতক্ষীরা সদরের নেবাখালী গ্রামের আব্দুল কাদির এর ছেলে সিটি কলেজের দর্শণ বিভাগের প্রভাষক শেখ নাসির আহমেদ, সদরের গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত ধীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকার এবং আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের মৃত নুর আলী সরদারের ছেলে বর্তমানে শহরের পলাশপোল মধুমল্যারডাঙ্গীর বাসিন্দা কলেজ শিক্ষাঙ্গনের তথ্য জালিয়াতির নায়ক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো: আবু সাঈদ।
অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে রেজুলেশন জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২০ শিক্ষক নিয়োগ ও ২১ শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৫ আগষ্ট সাতক্ষীরায় এসে তদন্ত শুরু করেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ এমদাদুল হক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুকুমার দাসকে সাতক্ষীরা এলজিইডি অফিসের রেষ্ট হাউজে ডেকে সিটি কলেজের দূর্ণীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অবগত হন।
অভিযুক্ত ২১ জন প্রভাষক ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নেওয়া হয় তাদের লিখিত জবানবন্দি। পরবর্তীতে
বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোঃ মনিরুল ইসলাম, ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান,
দর্শণ বিভাগের প্রভাষক শেখ নাসির আহম্মেদ ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুন কুমার সরকারের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়।
২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুদকের হটলাইনে শিক্ষক্ষ বিধান চন্দ্র দাসের অভিযোগের পর তদন্ত প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় গত বছরের বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে এ সকল শিক্ষককে তদন্ত কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে হয়।
অভিযুক্ত চার জন প্রভাষকের অনার্স শাখায় নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জালিয়াতি করে ডিগ্রীর তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নাম না জানা জাতীয় দৈনিক প্রভাত ও স্থানীয় পত্রদূত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নিয়োগ কমিটি গঠণ করা হয়। ৪ ডিসেম্বর এক পরিপত্রে উক্ত বোর্ডের মাউশির প্রতিনিধি হিসেবে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি এলপিআর এ যাওয়া অধ্যক্ষ সুকুমার দাসকে ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দেখানো হয় যুদ্ধাপরাধী মামলার তৎকালিন জেলে থাকা আসামী মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডলকে। ওই বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ওই চারজন শিক্ষককে ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর নিয়োগ চুড়ান্ত করা হয়। যদিও ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ব^বিদ্যালয়ের এক পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় যে ওই চার প্রভাষকের নিয়োগকালিন সময়ে খালেক মণ্ডল সভাপতি ছিলেন না। ২০০২ সালের ২৪ জুন থেকে ২০০৬ সালের ৩ আগষ্ট পর্যন্ত খালেক মণ্ডল সভাপতি ছিলেন।
মামলার বিবরনে জানা যায়, তৎকালিন অধ্যক্ষ মোঃ ইমদাদুল হকের সময়ে ওই চার প্রভাষকের নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশন দেখালেও শুধুমাত্র কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষক আবু রায়হানের ২০০৫ সালে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। অন্য তিন জনের রেজুলেশন তার নয় বলে তদন্তে জানা যায়। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর রুপলী ব্যাংকের সাতক্ষীরা কর্পোরেট শাখা থেকে সিটি কলেজের কর্মকর্তা/ কর্মচারির বেতন তালিকায় অধ্যক্ষ হিসেবে ইমদাদুল হক ও সভাপতি হিসেবে তৎকালিন সাংসদ এমএ জব্বারের সাক্ষর দেখা যায়।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় ব্যাইনবেস এর তথ্য অনুসারে মোঃ মনিরুল ইসলামের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর, এসএম আবু রায়হানের যোগদান ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ, মোঃ নাসির আহম্মেদ এর প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর ও অরুন কুমার সরকারে প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ওইসব শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ জালিয়াতি করে মনিরুল ইসলাম ও অরুন কুমার সরকারের যোগদান ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, এসএম আবু রায়হান ও মোঃ নাসির আহম্মেদ এর যোগদান ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেখানো হয়েছে। মাউশি’র ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় যে ২০১০ সালের ৪ ফেব্র“য়ারির পূর্বে ডিগ্রী স্তরের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। এই পরিপত্র জারির পরপরই অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ওই চার শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিও ভুক্তির জন্য অফলাইনে মাউশি বরাবর আবেদন করেন। এরই আলোকে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তারা এমপিওভুক্ত হন। অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যোগসাজসে ওই চারজন শিক্ষক ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৯ আগষ্ট পর্যন্ত বেতনভাতা বাবদ ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা রুপালী ব্যাংক সাতক্ষীরার করপোরেট শাখা থেকে উত্তালন করে আত্মসাৎ করেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টে দুদকের মামলা পরিচালনাকারি রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, মামলার কপি তিনি পেয়েছেন। পরবর্তীতে ওই মামলা যথাযথভাবে পরিচালনা করা হবে।#