কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা ব্যুরো : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমির নাম রুপসী দেবহাটা পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতির অকৃপণ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা এই পর্যটন এনে দিতে পারে অপার সম্ভাবনা। এই অঞ্চলটি যেন প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁচলে ঢাকা। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে।
এখানকার প্রাকৃতিক শোভা অতি সহজে মুগ্ধ করে যে কাউকে।
দেবহাটা উপজেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান রুপসী দেবহাটা পর্যটন কেন্দ্র। অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ। এখানে নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্ন বিচরণ চোখে পড়ে।
এ ছাড়া ইছামতী নদীর তীরে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলও প্রায়ই তৈরি করে দেখার মতো এক দৃশ্য।
বনাঞ্চলটির ইছামতী নদীর ও পারে ভারত আর এই পারে বাংলাদেশ সীমান্ত মোহনায় গড়ে উঠেছে রুপসী দেবহাটা পর্যটন কেন্দ্র। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ বন নানান গাছ-গাছালিতে সমৃদ্ধ। এ ছাড়া বনে দেখা মেলে জীবন্ত ও কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী। এছাড়া হরেক রকমের পাখ-পাখালির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ।
বনের ভেতর বন আর নদীর বিশাল জলরাশি দর্শনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ফুট ট্রেইল। এই ফুট ট্রেইল নির্মাণের কারণে বনের ভেতর এঁকেবেঁকে চলা উঁচু পিলারের ওপর পায়ে হেঁটে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বনের প্রকৃতি দর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন। ইছামতি নদীর কোল ঘেঁষা রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের ভেতর নির্মাণাধীন ফুট ট্রেইল (বনের ভেতর পায়ে চলা সেতু আকৃতির পথ)দর্শনার্থীদের নিসর্গ মায়ায় টানছে। ফুট ট্রেইল নির্মাণের ফলে রুপসী পর্যটন কেন্দ্র আকর্ষণীয় পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ ছাড়াও বনের ভেতর রেস্ট হাউজ ও গোলঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
সুন্দরবনের আদলে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন এই বনে কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। একদিকে বিস্তীর্ণ ইছামতি নদীর হাতছানি, অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যেন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি দেবহাটা উপজেলার শিবনগর মৌজার ১ নং খতিয়ানের ৩৯৮ নং দাগের ইছামতি নদীর তীরে জেগে ওঠা চরভূমি। যার আয়তন ৩১.৪৬ একর (০৭ একর পুকুরসহ)। দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বন সাতক্ষীরা জেলার বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁচলে ঢাকা রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটক কেন্দ্র বনাঞ্চল। প্রকৃতির এই লীলায় সাজানো রুপসী পর্যটক কেন্দ্রে কর্মব্যস্ত মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু বিনোদনের জন্য ছুটে আসেন পর্যটক কেন্দ্রে।
রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পিকনিক স্পটটি প্রশাসনের পৃষ্টপোষকতায় ইতোমধ্যে অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র রুপে রুপ ধারন করেছে। কেন্দ্রটিকে আরো নান্দনিক ও নয়নাভিরাম করে একটি সৌন্দর্যপূর্নভাবে মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য গড়ে তুলতে ট্রেইল নির্মান ও দীঘিতে প্যাডেল বোর্ড দেওয়া, পাকা বেঞ্চ নির্মান, গাড়ী গ্যারেজ, উপজেলা সদর থেকে রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যন্ত পিচের রাস্তা নির্মান সহ বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ বিভাজনকারী ইছামতি নদীর কুল ঘেষে দেবহাটা উপজেলার শিবনগর গ্রামে গত কয়েক বছর আগে মানুষের চিত্ত বিনোদনের লক্ষ্যে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় রুপসী ম্যানেগ্রাভ পর্যটক কেন্দ্র। পাশাপাশি কৃত্রিম সব জীবজন্তু, খেলনা সামগ্রীসহ নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে পরিবারের সাথে আনন্দে মেতে উঠছে শিশুরাও। পর্যটকরা বলছেন, এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করছে।
পর্যটন কেন্দ্রটির ম্যানেজার দিপঙ্কর কুমার ঘোষ জানান, এখানে সব ধরণের দর্শণার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। বর্তমানে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী এই পিকনিক স্পটটি আরো সুন্দর করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহনের কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য এই বিনোদন কেন্দ্রটিতে রয়েছে। তাই এটিকে আরো নান্দনিক ও সৌন্দর্যপূর্ন করতে ইতোমধ্যে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই রুপসী ম্যানগ্রোভকে আরো নান্দনিক করতে অনেক কাজ চলমান রয়েছে।