নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরা সদর থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ঝাউডাঙা ইউপি চেয়াম্যান আজমলউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । বুধবার দুপুর একটার দিকে তাকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আজমলউদ্দিনের (৫৮) বাবার নাম জামালউদ্দিন তিনি একই গ্রামের একব্বর মোড়লের ছেলে ইসলাম মোড়লকে ২০১৪ সালের ১৩ জুন রাতে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সন্ধিগ্ধ আসামী।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক ফিরোজ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ১০ জুন সদর উপজেলার ইসলাম মোড়ল হত্যা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে ঝাউডাঙা ইউপি চেয়ারম্যান আজমলউদ্দিনকে বুধবার দুপুরে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমাÐ আবেদন জানিয়ে বুধবার বিকেল আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের একব্বর মোড়লের ছেলে ইসলাম মোড়ল (৫৮) একজন মাছ ব্যবসায়ি। বিচার শালিসে তার এলাকায় প্রচুর সুনাম ছিল। এ সুনাম সহ্য করতে পারতো না স্থানীয় একটি মহল। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ থেকে ৩৫ নং আসামীরা ২০১৪ সালের ১০ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তালা- কলারোয়া-১ আসনের সাবেক সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বাড়িতে এক জরুরী বৈঠক করে। বৈঠকে ইসলাম মোড়লকে হত্যার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয়। পুলিশসহ সকল আসামীরা ২০১৪ সালের ১২ জুন দিবাগত রাত একটার দিকে বাদির বাড়ি ঘিরে ফেলে। ডাকাডাকির একপর্যায়ে ইসলাম মোড়ল ঘরের বাইরে এলে কয়েকজন আসামী তাকে জাপটে ধরে উঠানে নামায়। কয়েকজন আসামী তাকে মারপিট করে পুলিশ পিকআপে তুলে দেয়। পরে কয়েকজন আসামী পুলিশ পিকআপে উঠে ইসলামের চোখ বেঁধে ফেলে।
পুলিশ ভ্যানটি সাতক্ষীরার দিকে চলতে থাকলে বাদিসহ চারজন সাক্ষী দুটি মটর সাইকেলে করে পুলিশ পিকআপের পিছনে পিছনে যেতে থাকে। মাধবকাটি পৌঁছানোর পর পুলিশ বাদিসহ চারজনকে সামনে যেতে মানা করে। মাধবকাটি থেকে সাতক্ষীরার দিকে আনুমানিক ৩০০ হাত যাওয়ার পর ছয়ঘরিয়া তিন রাস্তার মোড়ে পুলিশ পিকআপটি থেমে যায়। সেখানে দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান বাদি ও কয়েকজন সাক্ষী। বাদি পরে সেখানে যেয়ে রাস্তার উপর তাজা রক্তের ছাপ দেখতে পান।
ইসলামের লাশ পুলিশ পিকআপে তুলে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে বাদিসহ অনেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসে ইমলাম মোড়লের লাশ দেখতে পায়। ইসলাম মোড়লের বুকে দুটি গুলির ক্ষত ছিলো। সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে ইসলাম মোড়লের লাশ গ্রাম পুলিশ কামরুল দফাদারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই স্থানীয় মসজিদের সামনে নামাজে জানাযা শেষে ইসলামের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশের ভয়ে তখন মামলা করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকুলে থাকায় মামলা করা হলো।২১০৪ সালের ১৩ জুন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের পাথরঘাাটা গ্রামের ইসলাম মোড়লকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তার ভাই ইসরাফিল মোড়ল বাদি হয়ে সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক, পুলিশ পরিদর্শক নাসিরউদ্দিন, তালা- কলারোয়া-১ আসনের সাবেক সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, জজ কোর্টের সাবেক পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, সাবেক অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ওকালত আলী, কলারোয়া উপজেলা যুবলীগের তৎকালিন সভাপতি কাজী শাহাজাদা, সাতক্ষীরা পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন কালুসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০ জনকে আসামী করে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আমলী-১ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক বিচারক নয়ন বড়াল মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি মামলাটি ২৫ সেপ্টেম্বর থানায় রেকর্ড করা হয়।#