ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, কালিগঞ্জ: নানা অব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় গ্রুপিংয়ে জর্জরিত কালিগঞ্জের বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অবকাঠামো ও শিক্ষক স্বল্পতায় পড়াশুনার পরিবেশ বিঘিœত হলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি এখনও বিদ্যালয়ের অগ্রগতি বাঁধাগ্রস্ত করতে কাল্পনিক অভিযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন স্কুলে যেয়ে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে ভাড়াশিমলার কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির প্রচেষ্টায় বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর প্রায় অর্ধশত বছর পার হলেও অবকাঠামো ও শৌচাগার সংকটসহ বিভিন্ন সংকটের মুখে পড়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক প্রতিনিধি শেখ মোজাহিদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, আবুল হোসেন, অভিভাবক অসীম ঘোষসহ এলাকাবাসী জানান, মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ছাড়া অধিকাংশ মানুষ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে চিন্তাভাবন করেনা। তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। এমনকি তাদের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে ভর্তি না করিয়ে অন্য স্কুলে পড়ালেখা করাচ্ছে।
তারা আরও জানান, প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান খান ২০০০ সালে অবসরে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠান। এর আগে থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটিও শূন্য। তাছাড়া ২০১১ সালের পর থেকে কিছু ব্যক্তির দলাদলির মধ্যে পড়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা যায়নি। আহবায়ক কমিটি দিয়ে কোনো রকমে প্রতিষ্ঠান খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলেছে। প্রশাসনিক দু’টি পদ শূন্য থাকায় এবং ম্যানেজিং কমিটি না থাকার খারাপ ফল তীলে তীলে ভোগ করছে এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গত ০৫/০৮/১৭ তারিখে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক, গ্রন্থাগারিক ও অফিস সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগকৃতরা গত ১৭/০৮/১৭ তারিখে যোগদানের পর প্রধান শিক্ষক গাজী মিজানুর রহমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলীর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু এলাকার একটি মহল অর্থবাণিজ্য করতে না পেরে স্কুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এখানে নানাভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ যারা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তারা কেউই অভিভাবক না। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
স্কুল চলাকালে ১০ম শ্রেণির ছাত্র গৌতম কুমার সাহা ও সাকলাইন মোস্তাক, ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মেহেরুন নেছা মীম, সাদিয়া আক্তার, সৃষ্টিরেখাসহ আরও কয়েকজন জানান, নতুন হেডস্যার যোগদানের পর থেকে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে। তারা এখন খুব খুশী। এভাবে পড়াশুনা হলে ভাল রেজাল্ট করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে বলে তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এসময় তারা বলে, স্কুলে মাত্র একটা বাথরুম হওয়ায় তাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে। বর্ষাকালে স্কুলের সামনে পানি জমে যায়। শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় গ্রুপ সাবজেক্টে ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। তারা জরুরি ভিত্তিতে এসব সমস্যা দুর করে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানায়।
বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মের শিক্ষক স্বপ্না রানী সরকার জানান, তিনি ২০১২ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। প্রশাসনিক পদ শূণ্য থাকায় এবং শিক্ষক কম থাকায় পড়াশুনার বেশ সমস্যা হচ্ছিল। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের পরিবেশ আমুল পরিবর্তন হয়েছে। সঠিক দিক নির্দেশনা পড়ে শিক্ষার্থীরা পূর্নোদ্দমে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছে। খুব শীঘ্রই বিদ্যালয়টি পড়ালেখা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুনাম অর্জন করে এলাকার অভিভাবকদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব খান আসাদুর রহমান জানান, “আমি সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সেই লক্ষ্যে সরকারি বিধি মোতাবেক অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করার পাশাপশি বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি হবে বলে আশা করছি।