আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরার আশাশুনিতে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাই নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন এ ঘটনা প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। কেউ বলছেন আসামি ছিনতাইয়ের নামে নাটক করে পুলিশ তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে। অপরদিকে সেই ছিনতাই হওয়া ব্যক্তি বলছেন, চেয়ারম্যানের পরামর্শে পুলিশ আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগনের প্রতিরোধের মুখে তা পারেনি।
শুক্রবার সাতক্ষীরার আশাশুনির তালতলা বাজারে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বুলিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চার পুলিশ সদস্য আহত হন।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বুলি একজন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আমি নিজেও তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পুলিশ তাকে আজ আটক করার চেষ্টা করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশের ওপর হামলা করে বুলিকে ছিনিয়ে নিয়েছে’। চেয়ারম্যান বলেন বুলির সন্ত্রাসের কারণে গত দুই মাস যাবত আমি নিজে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারিনা। তার কারণে ১৪ টি ভূমিহীন পরিবার পালিয়ে গেছে। তার কারণে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এসব কারণে পুলিশ তাকে ধরতে এসেছিল।
তবে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বুলি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। চেয়ারম্যান সেখানে আসেন নি। আমি লোকজন নিয়ে দেড় লাখ টাকা ব্যয় করে বাঁধ সংস্কার করেছি। রাতে আবারও বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে দুটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়ে। আজ শুক্রবার সকালে এক থেকে দেড় হাজার লোক নিয়ে সেখানে বাঁধ সংস্কার কাজ করছিলাম। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তার পরামর্শে এসআই নয়ন চৌধুরী কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই এসে আমাকে বলেন ‘ ওসি সাহেব আপনাকে ডেকেছেন। থানায় চলুন’। তিনি তাকে সাদা পোশাকে থাকা তিন ব্যক্তিকে দেখিয়ে বলেন তাদের মোটর সাইকেলে উঠুন। বুলি বলেন ‘আমি রাজি হইনি, কারণ তারা আমার পরিচিত নন। তারা আমাকে অপহরন করতে পারে। আমি এসআইয়ের গাড়িতে উঠতে সম্মত হই।’
এ সময় শতশত নারী পুরুষ আমাকে নিয়ে যেতে বাধা দেন। তবে কোনো পুলিশের ওপর তারা হামলা করেনি। রফিকুল ইসলাম বুলি আরও বলেন এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন আমার ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তিনি বর্তমান সময়ে নানা কারণে হালে পানি পাচ্ছেন না। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা, অথচ তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেউ নেই। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যানের ডাকে হাতে গোনা কিছু লোক গিয়েছিলেন অথচ আমার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব কারণে আমার ওপর ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান। বুলি আরও বলেন আমি এক সময় যুবদল করতাম। গত ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করি। এর পর থেকে চেয়ারম্যান জাকির আমার প্রতি শত্রুভাবের আচরণ করে আসছেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে একটি নাশকতার মামলা করান। তিনি আরও বলেন চেয়ারম্যানের সাথে আমার শ্রীপুরে একটি মাছের ঘের নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এসব কারণে চেয়ারম্যান প্রতিশোধ নিতে পুলিশ দিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করেছেন। এর পরপরই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে জনগন।
এসআই নয়ন চৌধুরী বলেন, আমরা বুলি মেম্বরকে গ্রেফতারের জন্য যাই। গ্রেফতারের চেষ্টা করতেই হামলা হয় আমাদের ওপর’। স্থানীয় লোকজন বলছেন এসআই নয়ন চৌধুরী কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেন নি। তিনি চেয়ারম্যানের কথা মতো বুলিকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। অথচ সেই নয়ন চৌধুরী বুলি মেম্বরের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে বেশকিছু টাকা নিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের নাটক করেছেন
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করছি।