নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ১২নং যুগিখালি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসানসহ তার চার সহোযোগীর বিরুদ্ধে ভারতীয় এক নারীকে ধর্ষনের অভিযোগে আদালতে মামলা করা হয়েছে। বৃৃহস্পতিবার বিকালে সাতক্ষীরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে নির্যাতিত নারীর শাশুড়ী বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামালার আসামিরা হলেন-চেয়ারম্যান রবিউল হাসান, তার চার সহোযোগী সোহাগ হোসেন, আসাদুজ্জামান আসাদ, সোহাগ দফাদার ও কদম আলী। আদালত সূত্রে জানা যায়, বিচারক আশরাফুল ইসলাম মামলাটি এজাহারভুক্ত করে তদন্ত পূর্বক পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)কে নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয় বাদির ছেলে আফজাল ভারতের পশ্চিম বাংলায় দিন মজুরের কাজ করতে গিয়ে কিছু দিন আগে বিথারী গ্রামের এক নারীকে বাংলাদেশে এনে বিয়ে করেন। বিয়ের কাগজপত্র ও আদালতের অ্যাফিডেভিটও রয়েছে। তারা ঘর-সংসার করার এক পর্যায়ে যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান তার ছেলের বউকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। গত ৭ই সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান আফজালের বাড়িতে গিয়ে বলেন- বাজারে পুলিশ এসেছে তোমাদের আমার সাথে যেতে হবে। এ কথা বলে চেয়ারম্যান বাদির ছেলে ও বউকে যুগিখালি বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের দোতালায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাদের কাছে ১৫হাজার টাকা চেয়ে আফজালকে তিনি বলেন- তোমার বউ ভারতীয় নাগরিক। এখানে থাকতে চাইলে পুলিশকে এই টাকা দিতে হবে। আর না দিলে তোমার বউকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাবে। অভিযোগে বলা হয়- এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই চেয়ারম্যান থানার ওসির সঙ্গে কথা বলানোর নাম করে ওই রাতেই ছেলের বউকে নিয়ে যান। পরে তাকে থানায় না নিয়ে তোলা হয় কলারোয়ার পৌরসদরে ঝিকরা গ্রামের জনৈক বেকারী ব্যবসায়ী সঞ্জয়ের বাড়িতে। অভিযোগে আরও বলা হয়- ওই বাড়ির একটি কক্ষে ভারতীয় ছেলের বউকে আটকে রেখে প্রথমে আওয়ামীলীগ নেতা চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ও পরে পর্র্যায়ক্রমে তার চার সহোযোগী সোহাগ হোসেন, আসাদুজ্জামান আসাদ, সোহাগ দফাদার ও কদম আলী পালাক্রমে ধর্ষন করেন। ধর্ষন হওয়া ভারতীয় নারীকে গভীর রাতে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ইউপি পরিষদের চৌকিদার এমাদুলের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছায়ে দেন। ভোরে গৃহবধূর শ্বাশুড়ী ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়ির মধ্যে নিজের ছেলের বউকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। মামলায় তিনি আরও বলেন- সকালে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে প্রথমে সরকারি হাসপাতালে ও পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সুস্থ হয়ে কলারোয়া থানায় মামলা করা হলে পুলিশ তা রেকর্ড না করে ফেরত দেয়। বাধ্য হয়ে গৃহবধুর শ্বাশুড়ী সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান রবিউল হাসান সাংবাদিকদের জানান- ভারতীয় ওই মেয়েটিকে তার ইউনিয়নে নাগরিকত্ব দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বলেছিলেন আদালতের মাধ্যমে আসতে হবে। তা নিয়ে শালিসও হয়েছে। আজ হঠাৎ শুনতে পেলাম তার বিরুদ্ধে (চেয়ারম্যান) আদালতে ধর্র্ষণের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় ওই মেয়েটিকে ফেরত নেওয়ার জন্য মেয়েটির বাবা যোগাযোগ করেন। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়। চেয়ারম্যান আরও বলেন-এ ঘটনায় তার নিজ দলের প্রতিপক্ষ আগ্রহী।
এদিকে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ জানান- ভারতীয় ওই মেয়েটির বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু তাকে জানিয়েছিলেন যে মেয়েটি তার জিম্মায় রয়েছে। তবে মামলার বিষয়ে এখনো আদালত থেকে কোন অর্ডার পায়নি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টুর সাথে কথা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান- ভারতীয় মেয়েটি তার জিম্মায় ছিল। কিন্তু আদালতে মামলা হয়েছে সেটা তার নলেজে নেই। যদি মামলা হয়ে থাকে তাহলে পুলিশ প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।