তরিকুল ইসলাম লাভলু: ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বছরের একেক সময় একেক ঋতুর রূপ ধারণ করে এই সোনার বাংলাদেশ। তেমনই একটি মিষ্টি ঋতুর নাম শীত কাল। এক সময় শীতের মৌসুমে গাছিরা খেঁজুর গাছ থেকে রস বের করার একটি মনমুগ্ধ সুন্দর দৃশ্য আমাদের নজর কেড়ে নিত। পল্লীগায়ের এমন মন জুড়ানো দৃশ্য এখন আর আগের মত চোঁখে পড়ে না।
সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও উপর্যুপরী কর্তনের ফলে দিনে দিনে বিলুপ্ত হতে চলেছে দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেঁজুরের গাছ। খেঁজুরের গাছ মূলত এ দেশের একটি মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের রসনা তৃপ্তিতে খেঁজুর গাছ থেকে আমরা প্রতি শীত মৌসুমে পেয়ে থাকি সুস্বাদু গুড় আর পাটালীসহ স্বাদে ভরা অনেক রকম খাদ্য। যার ভিতরে অন্যাতম খেঁজুরের রসের সুস্বাদু পায়েস আর রসে ভিজানো শীতের পিঠা। নবান্ন উৎসবে আকর্ষণীয় খাবার প্রস্তুতের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান সর বা গুড়ে আমরা পেয়ে থাকি এই খেঁজুর গাছ থেকে। পিঠা-পুলি-পায়েস রাঁধতে খেঁজরের রস বা গুড়ের কোন জুড়ি নেই। খেঁজুরের রস বা গুড় বেশ অর্থকরী ফসল হিসেবেও বিবেচিত। বিশেষ করে খেঁজুরের রস দিয়ে তৈরি সুস্বাদু গুড়, পাটালী দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া ফল হিসেবে খেঁজুরও বেশ মজাদার ও সুস্বাদু খাদ্য। সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে শীত মৌসুমে অনেক পরিবার অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয় এই খেঁজুর গাছ থেকে। কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের রহমত উল্যাহ নামের এক খেঁজুরগাছী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি প্রতি মৌসুমে খেজুরের রস এবং গুড় বিক্রি করে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হই এবং এখান থেকে আমার পরিবারের অনেক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসে। অন্যর গাছ বর্গা নিয়ে তা থেকে উপার্জিত গুড় বা রস বাজরে বিক্রি করে বেশ স্বচ্ছন্দে সংসার চলে আমার। তবে গত কয়েক বছরে ইট ভাটা মালিকেরা খেঁজুর গাছ কেটে তাদের ভাটার জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করার কারণে এখন আর খেঁজুর গাছের তেমন দেখা একটা মেলে না।
অতি প্রয়োজনীয় খেঁজুর গাছের রস ও গুড় দিয়ে এত সুস্বাদু খাবার তৈরি হলেও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গাছ। নানা প্রয়োজনে উপর্যূপরী কর্তন করা হচ্ছে খেঁজুর গাছ। ইটের ভাটার জ্বালানি হিসেবে খেঁজুর গাছ কেটে উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে, আবার কখনও বসতবাড়ি তৈরির উদ্দেশ্যে জাইগা স্বল্পতার কারণে কেটে ফেলা হচ্ছে খেঁজুর গাছ। নির্বিচারে খেঁজুর গাছ কাটা হলেও নতুন করে এর চারা পোপনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেনা। প্রাকৃতিকভাবে যা জন্মাচ্ছে তাও আবার সুষ্ঠু রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে ছাগল-গরু খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে। যার ফলে বর্তমানে এ গাছের সংখ্যা প্রায় শূণ্যেও কোটায় এসে দাড়িয়েছে। গ্রাম বাংলার অতি প্রয়োজনীয় এই বৃক্ষটি এভাবে নির্বিচারে নিধন হতে থাকলে এক সময় ঐতিহ্যবাহী এই খেঁজুর গাছ দক্ষিণাঞ্চল থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উদ্যেগে নতুন করে চারা রোপনের উদ্যোগ গ্রহণসহ সুষ্ঠু সক্ষণা-বেক্ষণের মাধ্যমে এবং এর কর্তনের উপর আইনি বিধি নিষেধ আরো কওে গ্রাম বাংলার মানুষের অতি প্রয়োজনীয় এই বৃক্ষ সম্পদকে রক্ষা ও সম্প্রসারণ একান্ত আবশ্যক।
আসুন আমরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য খেঁজুর গাছ নিধন বন্ধ করি, খেঁজুর গাছ রোপণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করি।
পূর্ববর্তী পোস্ট