রাজধানীর বনানীতে অফিসে ঢুকে সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে হত্যার মিশনটি ছিল মাত্র আড়াই মিনিটের। এ সময়ের মধ্যে একজনকে হত্যা এবং তিনজনকে গুলি করে পালায় মুখোশধারীরা।
ঘটনার বর্ণনায় বনানীর চার নম্বর রোডের ১১৩ নম্বর বাড়িটির দারোয়ান বাজি পুলিশকে এ তথ্য জানান। পরে পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এর সত্যতা পান।
বনানীর ওই ভবনের বাইরে তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও বিকেল ৫টার পর দুটি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়া হয়। চালু থাকে মাত্র একটি। তদন্তের জন্য ওই ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
ফুটেজে দেখা যায়, চার মুখোশধারী স্বাভাবিকভাবে হেঁটে রাত ৭টা ৪৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে প্রধান ফটক দিয়ে অফিসে প্রবেশ করছে। ৭টা ৫২ মিনিট ৬ সেকেন্ডে অর্থাৎ প্রায় আড়াই মিনিট পর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসছে।
ওই ঘটনার পর ওই ভবনের দুই দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আসামি শনাক্তের জন্য বনানী থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তাদের একজনের নাম বাজি।
জিজ্ঞাসাবাদে বাজি পুলিশকে জানায়, তার সামনে দিয়ে চার মুখোশধারী ভেতরে প্রবেশ করে। আড়াই মিনিট পর বের হয়ে আসে। তবে বের হওয়ার সময় তাদের মুখে মুখোশ ছিল না। ভেতর থেকে একজন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল, তার শব্দ শুনে তিনি বাইরে থেকে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সবাইকে এলোপাতাড়ি মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখেন। তবে গুলির কোনো শব্দ শুনতে পাননি বলে পুলিশকে জানান তিনি।
নিহত সিদ্দিক মুন্সির বাসা উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়।
মুন্সির অফিসের পাশের ভবনে মুসা গ্রুপ নামে আরেকটি জনশক্তি রফতানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া ভবনটিও মুসা গ্রুপের মালিকের। মুসা গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে এস. মুন্সি ওভারসিজের সঙ্গে ব্যবসা করছে।
মুন্সি সম্পর্কে মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, মুন্সি সাহেব গত ৭-৮ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। বর্তমান অফিসে প্রায় তিন বছর ধরে আছেন। তার লেনদেন খুবই ভালো ছিল। কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছে- এমন কিছু শুনিনি। ফোনে তাকে হত্যার বিষয়ে শুনে আমরা হতবাক হয়েছি।
এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। সন্ত্রাসীরা মুখোশ পরে এসেছিল। হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক, স্থানীয় কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার রাতে ওই ঘটনায় সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে বানানী থানার পরির্দশক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। আশা করছি আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা যাবে।