নিজস্ব প্রতিনিধি: কলারোয়ায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কোদাল হাতে নিয়ে রাস্তা থেকে ইটভাটার কাদা-মাটি অপসারণ করলো।
কলারোয়ার বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার দৌরাত্মে নাকাল পথচারীসহ শিক্ষার্থীরা। ইটভাটায় মাটি আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের ট্রলি আর ইঞ্জিন ট্রলির রাস্তায় চলাচল এতটাই দ্রুতগতির যে পথচারীরা আতংকে থাকেন স্বাভাবিক চলাফেরায়। শুধু তাই নয়, চলন্ত ট্রলি থেকে মাটি পড়ে পিচঢালা রাস্তা যেমন মাটি-কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তেমনি ইটের সোলিং রাস্তা ও মাটির রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।
এসকল যানবাহন চলাচলে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা কিংবা নিয়মনীতি না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও পড়ছেন বিপাকে। আবার কতিপয় প্রভাবশালীদের সন্তুষ্ট করে দেদারছে চলছে ইটভাটা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মযজ্ঞতা। যেন দেখার কেউ নেই।
তবে ট্রাক্টরের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশনসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ইটভাটায় নিয়োজিত ট্রাক্টরগুলোর নূন্যতম কোন বৈধতা নেই। আর স্থানীয় পর্যায়ে তৈরিকৃত শ্যালো-ইঞ্জিনের ট্রলির ক্ষেত্রে তো কথা-ই নেই, তারা যেনো মগের মুল্লুকের বাদশা। পথচলার ক্ষেত্রে রাস্তাটা শুধু নিজেদেরই মনে করে এমন ভাবে চলে যে অন্য যানবাহন বা পথচারীরা প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন। ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনাও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীরা থাকে সবসময় আতংকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার কাজে নিয়োজিত মাটিবাহী যানবাহন থেকে পড়ে যাওয়া মাটির কারণে রোদ্রের সময় রাস্তা যেমন ধুলাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি সামান্য বৃষ্টিতেই সেই রাস্তা হয়ে ওঠে কর্দমক্ত। মাটি-কাদার জেরে পিচের পাকা রাস্তা স্লিপিং হয়ে শুধু যানবাহন নয় হেটে গেলেও পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
এমনই একটি চিত্র দেখা গেছে উপজেলার সোনাবাড়িয়া বাজারের পার্শ্ববর্তী সোনাবাড়িয়া হাইস্কুল সংলগ্ন পিচের পাকা রাস্তায়। গত দু’দিন আগের সন্ধ্যায় সামান্য বৃষ্টিতে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার উপর পড়ে থাকা ইটভাটার মাটিতে কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়ে চলাচলকারীরা। বিপদজনক হয়ে ওঠে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারিদের জন্য। মুনাফাখোর ইটভাটার মালিকদের চরম দায়িত্বহীনতা আর উদাসীনতায় ওই পরিস্থিতির সৃষ্টিতে স্থানীয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এগিয়ে না আসলেও মহতি উদ্যোগের হাত বাড়ায় স্কুল শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেরা হাতে কোদাল নিয়ে রীতিমত রাস্তা থেকে কাদা-মাটি অপসারণ করে। উপযোগি করে তোলে যাতায়াতের। কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা যখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে তখন বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীরা শুরু করে রাস্তা থেকে ইটভাটার মাটি-কাদা অপসারণে তাদের ও অন্যদের যাতায়াতের সুবিধার্থে। ওই দৃশ্য হঠাৎ দেখলে মনে হলো- শিক্ষার্থীরা যেন কোন ফসলি মাঠে কাজ করছে।
ক্লাস শুরুর আগে ও পরে সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের অর্ধশতাধিক ছাত্রের জনকল্যাণ ওই কাজ দেখে স্থানীয় অনেকে তাদের স্যালুট জানিয়েছে, করেছেন প্রশংসাও। কিন্তু হয়তো সামান্যতম লজ্জাবোধ হয়নি দায়ীদের।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান- ‘ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে মাটি পড়ে পাকা রাস্তায় কাদা হয়ে গিয়েছে। এখানে চলাচলও করা যাচ্ছে না। কেউ এগিয়ে না আসায় আমরা বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে এসে কাদা ও মাটি সরিয়ে দিচ্ছি।’
কলারোয়ায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় পড়ে থাকা ইটভাটার কাদা-মাটি অপসারণ
পূর্ববর্তী পোস্ট