নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষনের আসামী সোহাগ পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।
২২ এপ্রিল রবিবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া-হিজলদী রোডের ঘোজের বটতলা নামক স্থানে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়। ওই ঘটনায় আহত হয়েছে ২ পুলিশ সদস্য। উদ্ধার করা হয়েছে একটি ওয়ানশুটার গান ও এক রাউন্ড গুলি।
নিহত ধর্ষক সোহাগ সরদার (২৬) উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের সামছুর দফাদারের পুত্র।
কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ৯বছর বয়সী এক মেয়েকে ২১ এপ্রিল শনিবার দুপুরের পর বাড়ির পাশের একটি পুকুরে গোসল করতে গেলে তাকে একা পেয়ে পুকুর পাড়ে ধর্ষণ করে সোহাগ। সেসময় মেয়েটির চিৎকারে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রক্তক্ষরণ অবস্থায় প্রথমে কলারোয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই ঘটনায় শিশুটির নানি জাহানারা খাতুন বাদি হয়ে সন্ধ্যায় ধর্ষক সোহাগ সরদারকে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব দেব নাথ জানান- ঘটনার পরপরই ধর্ষক সোহাগকে গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ সাড়াশি অভিযান শুরু করে। গভীর রাতে খবর পান ধর্ষক ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী-সুলতানপুর সীমান্তে অবস্থান করার সময় দু’দল সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। রাত আড়াইটার দিকে কলারোয়া থানার এসআই সোলায়মান আক্কাজের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানকার ঘোজের বটতলা নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। কিছুক্ষণ পর রাস্তার পাশের একটি ফসলি মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় সোহাগকে উদ্ধার করে পুলিশ। তখন তার ডান হাতে ধরা অবস্থায় একটি ওয়ানশুটার গান বন্দুক ও পাশে পড়ে থাকা এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। গুরুতর অবস্থায় সন্ত্রাসী ফারুককে কলারোয়া হাসপাতালে নেয়া হলে ভোরে সে মারা যায়। ওই ঘটনায় কলারোয়া থানার এএসআই হাবিব ও এএসআই সাগর আহত হন।
ওসি বিপ্লব দেব নাথ আরো জানান- ‘প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে সোহাগ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রবিবার দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।’
কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.শফিকুল ইসলাম জানান- ‘রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলি নিহতের মাথার বাম কান দিয়ে ঢুকে ডান কান দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
বোয়ালিয়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান- ‘নিহত ধর্ষক সোহাগ চোরাচালানী ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। পাশাপাশি সে বিভিন্ন মাদক সেবন করতো। এলাকায় সে খারাপ ব্যক্তি হিসেবে কমবেশি পরিচিত ছিলো। তার পিতা সামছুর সরদার দীর্ঘদিন ভারতের মুম্বাই (বোম্বে) অবস্থানের পর বর্তমানে বাড়িতে থাকে। শনিবার ধর্ষণের ঘটনার পর ধর্ষক পুত্রকে টাকা দিয়ে পালাতে সাহায্য করে পিতা।’
এদিকে, শিশু ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ও অভিযুক্ত লম্পট নিহত হওয়ার খবরে কলারোয়ার সর্বমহলে পুলিশকে সাধুবাদ দিতে শোনা গেছে। অনেকে বলছেন- ‘পুলিশ সত্যি খুব ভালো কাজ করেছে। লম্পটদের শিক্ষা পাওয়া উচিৎ।’
উল্লেখ্য যে, শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে দেখতে যান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেরিনা আক্তার।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল মাহমুদ জানান- শিশুটির রক্তক্ষরন হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে।
শিশুটির খালা লিপি খাতুন জানিয়েছিলেন- ‘শনিবার দুপুরের পর শিশুটি স্কুল থেকে ফিরে তার নানীর বাড়ির পাশের একটি পুকুরে গোসল করতে গেলে সেখানে তাকে একা পেয়ে জাপটে ধরে মুখ চেপে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে লম্পট সোহাগ। এ সময় তার আতœচিৎকারে তিনিসহ পাড়ার কয়েকজন মহিলা এগিয়ে আসলে লম্পট সোহাগ পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হলে প্রথমে তাকে কলারোয়া হাসপাতালে ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
মেয়েটির মা জানায়- ‘মেয়ের খুব রক্ত খরন হচ্ছে, উঠে দাঁড়াতে পারছে না।’
স্থানীয়রা আরো জানান- ‘ঘটনাটি ঘটার সময় পুকুর ঘাটে শিশুটি নিজেকে বাঁচাতে অনেক চেষ্টা ও হাচড় পাচড় করে। এক পর্যায়ে বাঁশের ঘাটের ৪/৫টা বাঁশের অংশ ছাড়িয়েও যায়। মেয়েটা থাকতো তার মামার বাড়ি।’
‘লম্পট সোহাগের ২টা স্ত্রী ও ১টি সন্তান আছে। ঘটনার পর সোহাগের বাবা সোহাগকে টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলো।’
কলারোয়ায় ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষক বন্দুকযুদ্ধে নিহত
পূর্ববর্তী পোস্ট