এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শান্তির পায়রা উড়ছে যেন কোরীয় উপদ্বীপে। পুরোপুরি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে মতৈক্যে পৌঁছেছেন উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন ও মুন জে-ইন। পাশাপাশি প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক আগে শেষ হওয়া কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসানে এবং সংঘাতের পথ বন্ধ করতে চলতি বছরই শান্তি চুক্তি করার বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা।
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) দু’দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম ‘পানমুনজমে’ দুই প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় এ কথা জানানো হয়। ওই যৌথ ঘোষণায় সই করেন কিম ও মুন।
দুই নেতা যে বাড়িতে এই ঐতিহাসিক বৈঠক করেন, সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিস হাউস’ বা শান্তির বাড়ি। এই শান্তির বাড়িতে কিম ও মুনের মধ্যে আলোচনার পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইয়ুন ইয়াং-চ্যান এক বিবৃতিতে বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান দু’জন কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আন্তরিক ও খোলামেলা আলোচনা করেছেন। তারা গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ করেছেন আন্তঃকোরিয়া সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি নিয়েও।
চ্যানের ওই বিবৃতির পর দেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ‘পুরোপুরি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে পরমাণুমুক্ত কোরিয়া উপদ্বীপ গড়ে তোলার অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া দৃঢ়ভাবে একমত। কোরীয় উপদ্বীপে আর কখনও যুদ্ধ হবে না। শান্তির নবযুগের সূচনা হলো।’
যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, আগামী মে মাসেই পিয়ংইয়ং ও সিউলের শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক সংলাপ হবে। আর পূর্ণমাত্রায় চুক্তিকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে নিয়ে বহুপাক্ষিক সংলাপও করবে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া।
যৌথ ঘোষণায় সইয়ের পর এক উচ্ছ্বাসমাখা বিবৃতিতে কিম জং-উন বলেন, ‘আমি আশা করি দুই কোরিয়া আবার ‘পুনর্মিলিত’ হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে ঐতিহাসিক আলোচনা হয়েছে, তা আর দীর্ঘায়িত হতে পারে না।’
গত শতাব্দীতে হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই আলাদা হয়ে যায় দুই কোরিয়া। ১৯৫০ সালের জুন থেকে ১৯৫৩ সালের জুলাই পর্যন্ত দুই কোরিয়ার মধ্যে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ হয়। তিন বছরেরও বেশি সময়ের এই যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে ছিল চীন ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া)। আর দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে ছিল জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ
পশ্চিমা জোট। এতে আনুমানিক সাড়ে সাত লাখ উত্তর কোরীয় ও পৌনে দুই লাখ দক্ষিণ কোরীয় নিহত হয়।
ওই যুদ্ধের পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ে কেবল বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে উত্তেজনার উত্তাপই ছড়াচ্ছিলো কোরীয় উপদ্বীপে। এমনকি গত বছরের শুরু থেকে এ বছরের শুরু পর্যন্ত উপদ্বীপটি ঘেঁষে সামরিক যুদ্ধযানের মহড়াও আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলো। কিম ও মুনের বৈঠকের পর সেই কোরিয়া অঞ্চলেই এখন ছড়াচ্ছে ‘শান্তির বার্তা’ ।