নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিবি ইউনাইটেড হাই স্কুলের ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এবং অবৈধভাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগে গঠিত তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ২৯ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক, অভিযোগকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়কের বক্তব্য নেন এবং নথিপত্র সংগ্রহ করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ভাড়াটিয়া দোকানের জামানত, এফডিআর উত্তোলন, অনুদানের টাকা ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ফি জমা সংক্রান্ত হিসাবপত্র যাচাই-বাছাই করেছে। তদন্তে প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান স্বীকার করেন, করোনার পর থেকে তিনি ব্যাংকে কোনো টাকা জমা দেননি। এছাড়া একাধিক আর্থিক অনিয়মের সঠিক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। বিদ্যালয়ে আয়-ব্যয়, ক্রয়, নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই ও অর্থ কমিটি নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ দেখালেও কোন বিল ভাউচার দেখাতে পারেনি সেদিন তদন্ত কর্মকর্তাকে। বিদ্যালয়ে ৫টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৫ জন কর্মচারী থাকলেও, পদ শূন্য না থাকা সত্ত্বেও আরও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি। এছাড়া প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৫ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আসল কপিও তদন্তে দেখাতে ব্যার্থ হন। ১৯৯৬ সালের ৩০ জুলাই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয় খোলার অনুমোদন দেয় যশোর বোর্ড কিন্তু তিনি ১৯৯৫ সালে ১ জানুয়ারী অ্যাডহক কমিটি ও ২০ জুলাই নিয়মিত কমিটির মাধ্যমে বিষয় খোলার অনুমোদনের আগেই কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এমপিও ভুক্ত হন। যা সম্পূর্ণ নীতি বহিরভূত ও অবৈধ।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আকলিমা খাতুন জানান, ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মমিনুর রহমান। যোগদানের সময় তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিএড সনদ প্রদর্শন করেন, যা ২০০৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবৈধ ঘোষণা করে। এছাড়া ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বরে অভিভাবক সদস্য মনোরঞ্জন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ দিন প্রথম অধিবেশনে সম শহিদুল ইসলামকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং লক্ষীকান্ত মল্লিককে বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে কোআপ করে রেজুলেশন করা হয়। নিয়মিত কমিটি গঠন করে প্রথম অধিবেশন সম্পন্নের ১১ দিন পরে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ বলে দাবি করেন সিনিয়র শিক্ষক আকলিমা খাতুন। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ কতৃক বিদ্যালয়ের ২৯৩ জন ছাত্রীর বিতরণকৃত তিন মাসে ৮৭৯ প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ২৯৩ পিচ সাবান ছাত্রীদের মাঝে বিতরণ না করে বিক্রয় পূর্বক অর্থ আত্মসাৎ করেছে যা ঐ দিন তদন্তে প্রমানিত হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষিকা।
তদন্তের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর জবাব তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছি। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রমাণ হবে আমি দোষী কি না।’
তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল জানান, ‘আমরা সব তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। এখন একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে খুলনা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর পাঠানো হবে। পরবর্তীতে প্রতিবেদন অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন
অভিভাবকরা দ্রুত প্রতিবেদন প্রকাশ ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের অনিয়ম প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অডিট ও কার্যনির্বাহী কমিটির সক্রিয় তদারকি প্রয়োজন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অনিয়ম প্রতিরোধে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে বলে আশা করছেন তারা।’