মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটে সাধারণত স্মৃতি হিসেবে কোনো কিছুই লেখা থাকে না বা লিখে রাখার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের গায়ে লেখা থাকছে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।
স্থানীয় সময় বুধবার ফ্লোরিডার একটি হোটেলে এমনটিই জানালেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
মাস কয়েক আগে সরেজমিনে স্যাটেলাইট কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখতে ফ্লোরিডা আসেন তারানা হালিম। তখন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থালাস এলেনিয়া তারানা হালিমকে বলেন, সাধারণত স্যাটেলাইটের কোথাও কিছু লেখা যায় না। লেখার কোনো নিয়মও নেই। কিন্তু ৫৭তম স্যাটেলাইট দেশ হতে যাওয়া বাংলাদেশকে তারা স্মৃতি হিসেবে কিছু একটা লিখার সুযোগ দিতে চান।
তখন তারানা হালিম তাদের উদ্দেশে বলেন, আমি এখানে কিছু লেখার সাহস দেখাতে চাই না। আর যদি এতে কারও নাম লিখতেই হয় তাহলে তা অবশ্যই আমাদের জাতির জনকের নাম লিখতে হবে। আর আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্লোগান হচ্ছে জয় বাংলা। তখন তিনি থালাসের বিশেষ অমোচনীয় কালিতে নিজ হাতেই স্যাটেলাইটের গায়ে লিখে দেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। স্যাটেলাইটের পুরো মেয়াদকাল অর্থাৎ ১৫ বছরেও এ লেখা মুছেবে না।
বুধবার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সম্মানে স্পেস এক্সের দেয়া নৈশভোজে অংশ নিয়ে তারানা হালিম সাংবাদিকদের জানালেন এসব তথ্য। তারানাকে এ সময় বেশ আবেগাপ্লুত দেখা যায়।
এর আগে ১০ মে উৎক্ষেপণের জন্য চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করে স্পেসএক্স। সংস্থাটির এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে প্যাড ৩৯-এ থেকে ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসি স্পেসএক্স-এর বরাত দিয়ে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করে। মঙ্গলবার বিকেলে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত সময় হালনাগাদ করা হয়।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। আর ঋণ হিসেবে এইচএসবিসি ব্যাংক বাকি ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা দিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রাখা হবে।
গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লোরিডায় উৎক্ষেপণ কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবেন। আর ক্যাপ ক্যানাভেরালে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৭ মে সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময় ৮ মে) মহাকাশে যাত্রা করার কথা ছিল স্যাটেলাইটটির। তবে কারিগরি ত্রুটি ও আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় নির্ধারিত দিনে মহাকাশে যাত্রা করতে পারেনি স্যাটেলাইটটি।
৪ মে স্যাটেলাইটটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। অরল্যান্ডোর কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটেলাইটটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়।