অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের সংগঠন ‘আমেরিকান এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড আর্কিটেক্ট’ তথা এএবিইএ’র ৩ দিনব্যাপী মিলনমেলা তথা দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের সমাপ্তি হয়েছে রবিবার। প্রবাসের অভিজ্ঞতায় প্রিয় মাতৃভূমির সামগ্রিক কল্যাণে উপস্থিত সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিক সহযোগিতার সংকল্প ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা। সম্মেলনের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এ সময় বুয়েটের বর্তমান নাজুক অবস্থার আলোকে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করে বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ১০৩টি প্রাইভেট এবং ৪৬টি পাবলিক ইউনিভার্সিটির একটিও বিশ্ব র্যাংকিংয়ের প্রথম ২০০০টির মধ্যেও নেই। বলতে দ্বিধা নেই যে, বুয়েটের যে নাম-ডাক-কদর ছিল, তাও আজ হারাতে বসেছে। এজন্য হতাশ হলে চলবে না। আমরা যারা বিভিন্ন দেশে চাকরি-শিক্ষকতা করছি, তারা বুয়েটের এলামনাই হিসেবে এমন নাজুক পরিস্থিতির অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।’ এ লক্ষ্যে ড. রেজা ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই অর্থ দ্বারা গবেষণা প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। পাশাপাশি বুয়েটের সাজ-সরঞ্জাম ক্রয় করতে হবে। ছাত্রাবাসের ভঙ্গুর অবস্থা দূর করার পাশাপাশি খাদ্যের মান উন্নত করা যাবে।
অধ্যাপক জামিলুর বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ‘অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন বা বলতে পারেন যে, বুয়েট তো সরকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারের উচিত হলো তহবিল দেয়া। এর জবাবে বলবো, সবকিছু সরকারের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, রাষ্ট্র প্রদত্ত তহবিলেই আমরা বুয়েট থেকে উচ্চ শিক্ষালাভে সক্ষম হয়েছি। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপও রিটার্ন দেয়া উচিত।’ শিক্ষার মানোন্নয়নের মধ্য দিয়ে বুয়েটকে যদি বিশ্ব র্যাংকিংয়ের ২০০টির মধ্যে নেয়া যায়, তাহলে অন্যেরাও একই পন্থা অবলম্বনে উৎসাহ পাবে-উল্লেখ করেন জামিলুর রেজা।
নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন লং আইল্যান্ডের ইউনিয়নডেলে একটি হোটেলের বলরুমে বর্ণাঢ্য এই সমাবেশে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন বাংলাদেশ উইমেন ইন আইটি তথা বিডব্লিউআইটির পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবোটিক্স ও ম্যাকিনটোনিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, প্রাইভেট সেক্টরে অসাধারণ ভূমিকা পালনকারি ‘ম্যাক্স গ্রুপ’র প্রধান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর।
সম্মেলনে তথ্য-প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও উদ্ভাবন, ব্যবসা ও তারুণ্য, ক্লাউড কম্প্যুটিং, শক্তি ও ডাটা, উদ্যোক্তা, বিগড্যাটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রবোটিক্স, হাইটকে, তারুণ্যের ক্যারিয়ার, সাইবার সিকিউরিটি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ২০টিরও অধিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে।
প্রকৌশলী-পরিবারের সন্তানেরাও এ সম্মেলনে গভীর মনোযোগী ছিলেন। নাচ-আর গানের অনুষ্ঠান ছাড়াও সমাপনীতে ছিল বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ম্যানহাটারের চারদিকে নৌ-ভ্রমণের ব্যতিক্রমী আয়োজন। সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বেশ কয়েকজনকে ‘বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট’ প্রদান করেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ক্রেস্টপ্রাপ্তদের অন্যতম ছিলেন মার্কিন আইটি সেক্টরে উচ্চ বেতনে চাকরি পাবার জন্যে বিশেষ কোর্স প্রদানকারি ‘পিপল এন টেক ইন্সটিটিউট’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু হানিপ। ক্রেস্ট গ্রহণের পর আবু হানিপ বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে আমরা বাংলাদেশ থেকে যত দূরেই থাকি না কেন, আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেই দেশের কল্যাণে অবদান রাখা সম্ভব। ভারতীয় আমেরিকানরাই শুধু নন, তাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম এখন আমেরিকান অভিজ্ঞতায় ভারতকে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক উন্নত করেছে। আমরাও পশ্চিমা বিশ্বে লব্দ অভিজ্ঞতাকে প্রিয় মাতৃভূমির কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি। এ ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে সংশ্লিষ্ট সকলকে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে নেওয়ার প্রত্যাশা
পূর্ববর্তী পোস্ট