দেশের খবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশকে এ অবস্থায় উন্নীত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার কোন সদস্য দায়িত্ব পালনে কতটা দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন, সেই আমলনামা এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। বিভিন্নভাবেই তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সাফল্য মূল্যায়ন করেছেন। এই মূল্যায়নের ভিত্তিতেই গঠিত হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার। এমনকি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলে তৃতীয় মেয়াদের সরকারে কারা থাকবেন তাও হতে পারে এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজনের বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তাঁরা কেন সফল তা উল্লেখ করা হয়েছে ওই সব গোপন প্রতিবেদনে।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩৩ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী আছেন। এ ছাড়া মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা আছেন আরো পাঁচজন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত: অর্থমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে টানা ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। পর পর দুই মেয়াদে টানা ১০ বার জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করে রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রতিবারই বাজেটের আকার বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দেন মুহিত। এটি তাঁর ১২তম বাজেট। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের দুই মেয়াদের আগেও এরশাদ আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দুই দফা বাজেট পেশ করেছিলেন তিনি।
২০০৯ থেকে শুরু করে ১০ বছরে দেশের অগ্রযাত্রা কেবল শক্তিশালী নয়, জনকল্যাণকরও বটে। এই ১০ বছরে উন্নয়নশীল অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ৫.১ শতাংশ, তখন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৬.৬ শতাংশ। সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে ৪.৩ শতাংশ থেকে ৮.২ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ৭৫৯ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫২ ডলারে। মূল্যস্ফীতি ১২.৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৫.৮ শতাংশ। রাজস্ব জিডিপির অনুপাত বেড়েছে ৯.২ শতাংশ থেকে ১০.৩ শতাংশে।
স্পষ্টবাদী ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী মুহিত পরিবেশ সচেতনও।
আমির হোসেন আমু: পরিবেশ অধিদপ্তরের কালো তালিকায় থাকা হাজারীবাগের সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও এক যুগের বেশি সময় ধরে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। আমির হোসেন আমু শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তাঁর কঠোর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপে হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সাভার চামড়া শিল্পনগরে স্থানান্তর সম্ভব হয়। চামড়া খাতের বিকাশে দেশে আরো দুটি চামড়া শিল্পনগরী গড়ারও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
এ সময়ে দেশে সারের সরবরাহ নিশ্চিত করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কোথাও সারের ঘাটতি হয়নি। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার সব সার কারখানা সচল রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুরো শিল্প খাতে গতিশীলতা আনতে যথাসময়ে শিল্পনীতি চূড়ান্ত করা হয়। প্রায় ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সহায়ক মোটরসাইকেল নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাহাজ নির্মাণশিল্প নীতিমালা এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। এ নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে। আমির হোসেন আমু শিল্পমন্ত্রী হওয়ার পর ইলিশ মাছের স্বত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আরো ২১টি পণ্যের স্বত্ব অর্জন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
তোফায়েল আহমেদ: দেশে বেসরকারি খাতের সার্বিক উন্নয়ন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব ‘লিয়াজোঁ মিনিস্ট্রি’ হিসেবে খ্যাত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমান সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে এ মন্ত্রণালয় রয়েছে মুখ্য ভূমিকায়। ফলে এই মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করাটাও এক রকম চ্যালেঞ্জেরই। নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গত পাঁচ বছরে দেশে ব্যবসা উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে দারুণভাবে সফল হয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন খাতে ব্যবসায়ীদের পুঞ্জীভূত বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধানে বেশি নজর দেন। এতে বেসরকারি খাতের দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। বেড়েছে পণ্য উৎপাদন ও শ্রমিকের দক্ষতা। পণ্যের জোগান বাড়ায় দ্রব্যমূল্যও স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।
রপ্তানিপণ্যে প্রণোদনা অব্যাহত রাখায় চার বছরের ব্যবধানে রপ্তানি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় চার হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর নগদ সহায়তা ২৭ খাত থেকে বাড়িয়ে ৩৬টি করা হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির কার্যক্রম সচল আছে। সাস্টেইনেবল কমপ্যাক্ট ও কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে পাওয়া জিএসপি হাত ছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাণিজ্যমন্ত্রীর কৌশলী অবস্থান, গ্রহণযোগ্যতা ও দৃঢ়তার কারণে তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক স্বীকৃতি লাভের পর বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছে।
মতিয়া চৌধুরী: নতুন আবাসন গড়া, শিল্প-কারখানা স্থাপনসহ নানা কারণে প্রতিবছর কৃষি জমি কমে যাচ্ছে ১ শতাংশ হারে। এ অবস্থায় ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। গত ১০ বছরে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। এ সময়ে মতিয়া চৌধুরীর একক নেতৃত্বে কৃষি খাত একটি স্থিতিশীল অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এই স্থিতিশীলতা শুধু কৃষিপণ্য উৎপাদনে নয়, এসেছে পণ্যের পুষ্টিতেও। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে স্থিতিশীলতা দেওয়ার জন্য কৃষিমন্ত্রী সময়মতো সার সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। জোট সরকারের আমলের সার ব্যবস্থাপনা নীতি পাল্টে তিনি সমন্বিত নীতিমালা করেছেন। আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে সারের ডিলার ছিল। নতুন নীতিমালায় ওয়ার্ড পর্যায়ে ডিলারদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নতুন নীতিমালার পরই দেশ থেকে সার সংকট দূর হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রীর উদ্যোগে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। সার ছাড়া ভর্তুকি চালু করা হয়েছে রবিশস্য চাষে উৎসাহিত করার জন্য। কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, পাওয়ার থ্রেসারের মতো যন্ত্রপাতি ২৫ শতাংশ কম দামে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতির প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সেচ, গবেষণাসহ বিভিন্ন সেক্টরে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য দেশের বৃহত্তম বীজবর্ধন খামার স্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রীর উদ্যোগে। তাঁর সময়ে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনসহ নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ছত্রাক ও পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনে সহায়তা দিয়ে তিনি যুগান্তকারী সাফল্য পেয়েছেন।
মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগে মাত্র ১০ টাকা জমা করে কৃষকদের ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে মতিয়া চৌধুরী কৃষি খাতকে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত করেছেন। মতিয়া চৌধুরীর এ সাফল্য কৃষিবান্ধব সরকারের একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
ওবায়দুল কাদের: ২০১২ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (নতুন নাম সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম আড়াই বছরেই দেশের ৬৪ জেলার ২০৪ উপজেলায় ৩৮১ দিন সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শন করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি শুধু ঢাকার বিভিন্ন সড়কই পরিদর্শন করেছেন ৩৯ দিন। মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে বসে না থেকে তিনি ছুটে যান মাঠে। সড়কের কাজ পরিদর্শন করে নজির সৃষ্টি করেন তিনি। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে শেষ হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে যাত্রীবেশে নিজেই গাড়িতে চড়েছেন, লাইসেন্স পরীক্ষা করেছেন। হঠাৎ হানা দিয়েছেন বিআরটিসি কিংবা বিআরটিএ কার্যালয়ে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। এই প্রকল্পের কাজ ৫৭ শতাংশ এগিয়েছে। ঢাকার যানজট নিরসনে নেওয়া মেট্রো রেল প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকেই। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে বিমানবন্দর সড়ক থেকে বনানী পর্যন্ত। সেটি যাবে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত। দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা) কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগোচ্ছে। ৮০ শতাংশ মহাসড়কই চলাচলের উপযোগী। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন সংসদে উঠেছে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু: পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কে বলা হয়, বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য যে টাকা দেওয়া হয়, সে টাকা পানিতেই চলে যায়। গত জানুয়ারিতে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মানুষের দীর্ঘদিনের এমন নেতিবাচক ধারণা বদলাতে কাজ করছেন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। প্রতিবছর সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য বাড়তি টাকা চাওয়ার রেওয়াজ ভেঙে এবারই প্রথম মন্ত্রণালয়ের জন্য বাড়তি টাকা চাননি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাঁর মতে, এডিপিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে যে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটিই যথেষ্ট। গত ১০ মাসে বেড়িবাঁধ নির্মাণ আর ফোল্ডার ছাড়া নতুন কোনো প্রকল্পে হাত দেয়নি মন্ত্রণালয়। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতে, সরকারের শেষ সময়ে নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া ঠিক নয়। বরং পুরনো প্রকল্প যেগুলো ধীরগতিতে চলছে, সেগুলোতে গতি আনাই মুখ্য। সে অনুযায়ী কাজ করছেন তিনি। ‘সীমান্ত নদী সংরক্ষণ’ নামের একটি প্রকল্প দুই বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি আগামী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠানোর প্রক্রিয়া করে দিয়েছেন মঞ্জু। অপচয়ের বদনাম ঘুচিয়ে মন্ত্রণালয়কে নিয়ম-কানুন ও কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এর আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন চার বছর। তখন সেখানে কর্মকর্তাদের ‘গাছ চোর’ হিসেবে যে বদনাম ছিল, তা ঘুচিয়েছেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন: পেশায় প্রকৌশলী ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বাংলাদেশের সীমানার বাইরেও চাকরি করেছেন জাতিসংঘের অধীনে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। এখন তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী। এ মন্ত্রণালয়ের অধীন সবচেয়ে বড় সংস্থা এলজিইডির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। চাকরিজীবনের মতো তিনি সফল মন্ত্রী হিসেবেও।
তিন বছর আগে খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর বাজেট ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকায়। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতার কারণেই বাজেট বেড়েছে। তাঁর সময়ে ১০ হাজার কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা হয়েছে। বর্তমানে ২৮৫টি পৌরসভায় মাস্টার প্ল্যানের আওতায় উন্নয়নকাজ চলছে।
খন্দকার মোশাররফ মন্ত্রী হিসেবে যোগদানের পর এলজিইডি ফ্লাইওভার নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করেছে। রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভার এলজিইডির অর্থ ও তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে।
ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ঠেকাতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন পদ্মা নদীর যশোলদিয়া, মেঘনার গন্ধব পয়েন্ট ও সায়েদাবাদ ফেজ-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকায় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন। ঢাকার খাল উদ্ধারে পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া এখন সারা দেশে জমি আছে, ঘর নেই এমন লোকদের গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছে এ মন্ত্রণালয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী হওয়ার পর। দপ্তর, অধিদপ্তরগুলোর কাজে গতি এসেছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সুসম্পর্ক বেড়েছে। মন্ত্রণালয়ের সাফল্য দৃশ্যমান হওয়ায় সরকারের সর্বত্র এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের প্রশংসা আছে।
এ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে ২৬টি প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার ২২০টি প্লট উন্নয়ন করে বরাদ্দ দিয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগরীতে ১৩টি অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসব প্রকল্পের আওতায় পাঁচ হাজার ৭৭৫টি অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ দিয়েছে। চলমান ২৯টি প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার ৮৫৫টি প্লট তৈরি করা হবে। এ ছাড়া ২১টি প্রকল্পের আওতায় ৩৩ হাজার ১৯১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চারটি প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯টি প্রকল্পের আওতায় আট হাজার ১৯০টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ চলছে। ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্য ১১ হাজার ৮৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। মাসিক ভাড়ায় বস্তিবাসীদের এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ দায়িত্ব নেওয়ার পর বেগুনবাড়ীখালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি পায়। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ নেন তিনি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ: গত ১০ বছরে শিক্ষা খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বছরের প্রথম দিন বিনা মূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই। ১০ বছরে একবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিবছর দেওয়া বইয়ের সংখ্যা ৩৫ কোটিরও বেশি। সারা বিশ্বের চোখেই এটা বিস্ময়। প্রতিবছর দুই কোটি ৬৭ লাখ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের বৃত্তি, যা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। অনেক দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশে এরই মধ্যে শিক্ষায় অর্জিত হয়েছে জেন্ডার সমতা। বিনা মূল্যের বই, উপবৃত্তিসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের সুফল মিলছে এখন। সব শিশু স্কুলে যাচ্ছে। শিক্ষায় মেয়েদের আগ্রহ বেড়েছে। এ কারণে কমেছে ঝরে পড়া এবং বাল্যবিয়ে। শিক্ষা খাতে এই বিপ্লবের পেছনে ১০ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
২০০৯ সালে দেশে কারিগরিতে শিক্ষিতের হার ছিল ১ শতাংশেরও কম। বর্তমানে এই হার ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ১০ বছরে ২৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রণীত হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০। পাবলিক পরীক্ষায় ফিরেছে শৃঙ্খলা। নির্দিষ্ট তারিখেই অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা, প্রকাশিত হয় ফল। স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এখন স্বপ্ন নয়। মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। একের পর এক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে উচ্চশিক্ষায় দেখা দিয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। গবেষণায়ও এসেছে যুগান্তকারী সাফল্য।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দক্ষ ও সফল নেতৃত্বে ১০ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন। আমি তাঁর একজন একনিষ্ঠ কর্মী মাত্র। তাই শিক্ষা খাতে যা সাফল্য এর অবদান একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জনগণও এই সাফল্যের ভাগীদার।’
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি এর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তখন মন্ত্রণালয়ের নাম ছিল ‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কাজ এ মন্ত্রণালয়কে করতে হয় বলে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর আনিসুল ইসলাম অনুধাবন করেন যে মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ বিষয়টি সংযোজন করা হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তাঁর হস্তক্ষেপে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হয়। তাঁর ত্বরিত সিদ্ধান্তের কারণে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে গতিশীলতাও অনেক বেড়েছে। বন বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ও জটিল পদোন্নতি প্রক্রিয়া তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে শেষ করে এনেছেন।
আসাদুজ্জামান খান: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন আসাদুজ্জামান খান। প্রথমে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তখন মন্ত্রণালয়ে কেউ পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দক্ষ পরিচালনার পুরস্কার হিসেবে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই আসাদুজ্জামান খানকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সময়ে কাজের সুবিধার জন্য স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা এবং সুরক্ষা-সেবা বিভাগ গঠন করা হয়।
এ সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) এলআইসি শাখা গঠন করা হয়। বিশেষ অপরাধ তদন্তের জন্য গঠন করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশের পদমর্যাদা বাড়ানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে আসে একের পর এক সাফল্য। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার কিংবা নিহত হয়। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তও সফলভাবে শেষ করছে পুলিশ। এতে কমেছে জঙ্গি তৎপরতা। সংঘবদ্ধ অপরাধ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতার হারও কমেছে অনেকখানি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে বন ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
আনিসুল হক: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আনিসুল হক। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ বিষয়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের আদি সংবিধানে ফিরে যেতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়েছে।
১৭৯৯ থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রণীত সব আইন হালনাগাদ করে কালানুক্রমিক সূচিপত্রসহ ৪২ খণ্ডে বাংলাদেশ কোড প্রকাশ করা হয়েছে ২০১৭ সালে। লজ অব বাংলাদেশ নামে একটি ওয়েবসাইট বানানো হয়েছে, যাতে দেশের প্রচলিত আইনগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।
সন্ত্রাসবিরোধী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। আরো ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে সেগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় একটি সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে।
দরিদ্র-অসহায় মানুষকে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্প লাইন ১৬৪৩০ চালু হয়েছে। নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী নিবন্ধন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে।
নসরুল হামিদ বিপু: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে গত পাঁচ বছরে। আর বিদ্যুতের এই অগ্রগতির পেছনের কারিগর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি হচ্ছে তাঁর হাত ধরেই। ভারত থেকে এক হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হয়েছে নসরুল হামিদের আমলে। এলপিজির দাম সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন বিপু। দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে গত পাঁচ বছরে। চলতি বছরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পটুয়াখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে গতি আনতে কাজ করেছেন বিপু। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ ঘটেছে তাঁর সময়ে।
বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সারা দেশে বিদ্যুতের শতাধিক প্রকল্প চলমান। মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু নসরুল হামিদের হাত ধরেই। বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া দেশে ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাজ করছেন নসরুল হামিদ।
দশ বছর আগে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল এক কোটি আট লাখ, উৎপাদনক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৩২ মেগাওয়াট। এখন গ্রাহক তিন কোটিতে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৯০২ মেগাওয়াট অর্থাৎ চার গুণ। বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন দশ বছর আগে ছিল তিন হাজার মেগাওয়াট, সেটি এখন ১১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট।