বিদেশের খবর: ভারতে কৃষকদের বিক্ষোভে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্ত। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে প্রবেশের সবকয়টি সীমান্ত। ১৫ দফা দাবি নিয়ে রাজধানী দিল্লিতে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন প্রায় ৫০ হাজার কৃষক। পুলিশের জলকামান আর টিয়ার গ্যাসের সেলের আঘাতে ৩০ কৃষক আহত হয়েছেন। কৃষকদের মারা ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন পুলিশের সাত সদস্য। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তবে আজও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন কৃষক নেতারা। স্থানীয় স্কুল-কলেজ আজকের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। খবর রয়টার্স ও এনডিটিভি’র
দিল্লি সীমান্ত রণক্ষেত্র
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এই মহা কিষাণ র্যালিকে রাজধানীতে প্রবেশের আগেই বাধা দেয় পুলিশ। দুই দিন আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ সীমান্তে একত্রিত হচ্ছিলেন। এখানেই কৃষক-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের মাত্রা বেশি ছিল। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হরিদ্বারের টিকাইত ঘাট থেকে শুরু হয়েছিল পদযাত্রা। ডাক দেওয়া হয়েছিল দিল্লি অভিযাত্রার। নয়াদিল্লির রাজঘাটে শেষ হওয়ার কথা ছিল। যদিও কৃষকদের রাজধানীতে প্রবেশ আটকাতে গতকাল সকাল থেকেই অতিরিক্ত তত্পর ছিল দিল্লি পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লিমুখী জাতীয় সড়কে ঢল নেমেছিল কৃষকদের। প্রায় ৫০ হাজার কৃষক এই পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লি ঢোকার সবকয়টি রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। প্রায় অবরূদ্ধ করে রাখা হয় পূর্ব দিল্লির প্রীত বিহার, ময়ূরবিহার, জগতপুর, শকরপুর, মধুবিহার, গাজিপুর, জগতপুরি, কল্যানপুরী।
জনসভা, ৫ জনের বেশি জমায়েত, মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিল্লি পুলিশ। এরই মধ্যে গতকাল সকালে পদযাত্রা পৌঁছায় উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমানায়। ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীতে ঢোকার চেষ্টা করেন কৃষকেরা। তাদের আটকাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে দিল্লি পুলিশ। আহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি কৃষক। কৃষকদের ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়েছেন। কাঁদানে গ্যাসের শেলের বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন ভারত কিষাণ ইউনিয়নের হরিয়ানা শাখার প্রধান। ভারত কিষান ইউনিয়নের পক্ষে নরেশ টিকাইত বলেছেন, আমাদের কেন আটকানো হলো? আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই মিছিল করছিলাম। আমাদের সমস্যার কথা আমরা কি দিল্লিকে না জানিয়ে পাকিস্তান বা বাংলাদেশে গিয়ে জানাবো?
কৃষকদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস, জনতা দল (ইউনাইটেড), সমাজবাদী পার্টি, সিপিএম, রাষ্ট্রীয় লোকদলসহ প্রায় সবকটি বিরোধী দল। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মদিনে কৃষকদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনাকে নিষ্ঠুর বলে টুইট করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। উত্তেজিত কৃষকদের ক্ষোভ মেটাতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। কৃষকদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত।
১৫ দাবি কৃষকদের
মোট ১৫ দফা দাবিতে কিষাণ ক্রান্তি যাত্রার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষি ঋণ মওকুফ, আগের বকেয়া মূল্য পরিশোধ করা, স্বামীনাথন কমিটির সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন করা, কৃষকদের ন্যুনতম মাসিক আয় নিশ্চিত করা ও ৬০ বছর বয়সের পর সব প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাসিক ৫ হাজার রূপি পেনশন চালু করাসহ ১৫টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে সরকারের কাছে। তবে মূলত ১১টি দাবি নিয়ে কৃষক নেতারা সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন।
সমপ্রতি একাধিক রাজ্যে কৃষক বিক্ষোভে বেশ অস্বস্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এর আগে মহারাষ্ট্রে বিশাল লং মার্চ করে চমক দিয়েছিলেন সে রাজ্যের কৃষকরা। দিল্লিতে কিছুদিন আগেই তামিল কৃষকদের আন্দোলন নজর কেড়েছিল। কিছুদিন আগেই সাতরাজ্যে কৃষক ধর্মঘটেরও আয়োজন করা হয়।