অপ্রতিম: পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ, পৃথিবীতে এর চেয়ে বেশি ভারী বোঝা আর নেই। এমনই করুণ এক দৃশ্যে বিশ্বব্যাপী বিবেকবান মানুষ কাঁদছে।
অসুস্থ ছেলেকে কাঁধে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল দৌড়ে বেড়াচ্ছেন বাবা।
জরুরী বিভাগে চিকিৎসা না করেই পাঠিয়ে দেওয়া হল শিশু বিভাগে।
সেখানে যাওয়ার পরে ডাক্তারেরা বললেন আর কিছুক্ষণ আগে আনলেই বাঁচানো যেত ছেলেকে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও ইউ টিউবে ছড়িয়ে পড়েছে মঙ্গলবার।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের কানপুরে এই ছবি তোলা হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার যেখানে দেখা গেছে ১১ বছরের ছেলে অংশ-কে কাঁধে নিয়ে বাবা সুনীল কুমার দৌড়ে বেড়াচ্ছেন হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে।
ঠিক ওইদিনই ওড়িশা রাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল দানা মাঝি তাঁর মৃত স্ত্রীর দেহ কাঁধে চাপিয়ে ১২ বছরের মেয়েকে পাশে নিয়ে পায়ে হেঁটে ৬০ কিলোমিটার দূরের গ্রামের দিকে রওনা হয়েছেন।
মৃতদেহ বহন করার জন্য চেয়েও সরকারী গাড়ি পান নি তিনি।
দশ কিলোমিটার যাওয়ার পরে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক মি. মাঝির জন্য একটি সরকারী গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন।
কানপুরের ঘটনাটা আবারও ভারতের সরকারী চিকিৎসা পরিষেবার চূড়ান্ত অব্যবস্থার ছবি তুলে ধরল।
কানপুরের বাসিন্দা সুনীল কুমার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ছেলের খুব জ্বর ছিল গায়ে। ২৫ তারিখ সকালে একটা স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যাই। একটা ইনজেকশন দেওয়ার পরে ছেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরতে থাকে। ডাক্তারেরা বলেন সরকারী লালা লাজপত রাই হাসপাতালে নিয়ে যেতে। সেখানে জরুরী বিভাগে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করানোর পরে শিশু বিভাগে নিয়ে যেতে বলা হয়।“
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও একটা স্ট্রেচার জোগাড় করতে পারেন নি মি. কুমার। শেষে আবারও ছেলেকে কাঁধে চাপিয়ে যখন শিশু বিভাগে নিয়ে যান তিনি, ডাক্তারের বলেন যে ছেলে মারা গেছে। বিশ্বাস করতে চান নি বাবা। দৌড়েছিলেন আরেকটি হাসপাতালে।
“খুব ভিড় ছিল ওখানে। শেষমেশ ডাক্তার দেখে বললেন আর দশ মিনিট আগে যেতে পারলেই বেঁচে যেত ছেলেটা,” সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সুনীল কুমার।
ওই সরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটা কমিটি তৈরি করেছে তদন্তের জন্য। উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগের প্রধান সচিব অনুপ পাণ্ডে বলছেন, লালা লাজপত রাই হাসপাতালের সুপারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
শুধু হাসপাতালের নয়, তৈরি হয়েছে আরও দু-দুটো তদন্ত কমিটি।
তারা রিপোর্ট দেবে কয়েকদিনের মধ্যে, কিন্তু সামাজিক মাধ্যমগুলিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটা দেখে অনেকের প্রশ্ন, তাতে কি ফিরে আসবে ১১ বছরের অংশ?