নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সাতক্ষীরার সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য সেবার মান কতটা নি¤œগামী। হাসপাতালে সময়মত চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকেন না, অনেকেই ঠিকমত রোগী দেখেন না। বরং নিয়মিতই রোগীদেরকে নানা কৌশলে দালাল চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বারে ভাগিয়ে নিয়ে গলাকাটা ফিস নেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোর এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনো মেশিন, ইসিজি মেশিনসহ উচ্চ মূল্যে কেনা বভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। হাসপাতালের টয়লেট ও কিচেন চরম অস্বাস্থ্যকর। সরাকারি ওষুধ রোগীদের কপালে জোটে না বললেই চলে। বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে দরিদ্র অসহায় রোগীদের করা হয় সর্বশান্ত। সরকারি হাসপাতালের উন্নত প্রযুক্তির দামি যন্ত্রপাতি দিয়ে করা টেস্ট রিপোর্টের চেয়ে অনেক চিকিৎসক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নি¤œমানের যন্ত্র দিয়ে করা টেস্ট রিপোর্টকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই কমিশন পাওয়ার আশায় রোগীদেরকে এসব টেস্ট করাতে বাধ্য করা হয়।
এই যখন অবস্থা তখন, সরকারের বরাদ্দ দেয়া কোটি কোটি টাকা লুটপাটের খবর আপনাদের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় নাগরিকরা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন। আমরা গভীর বেদনার সাথে লক্ষ করছি যে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সরকার স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি ও মালামাল ক্রয়ের জন্য কোটি কোটি বরাদ্দ দেয়। কিন্তু মালামাল ও যন্ত্রপাতি বুঝে না পাওয়া সত্ত্বেও সাতক্ষীরার তৎকালীন সিভিল সার্জনসহ তার অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারী পারস্পারিক যোগসাজশে মালামাল বুঝে নেওয়া হয়েছে মর্মে মিথ্যা প্রত্যয়ন দিয়ে সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত দল আকষ্মিক সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে উপস্থিত হয়ে মালামাল ও যন্ত্রাংশ দেখতে চাইলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ইতিমধ্যে মালামাল বুঝে নেয়ার জন্য গঠিত সার্ভে কমিটিতে তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে মর্মে লিখিতভাবে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনকে জানিয়েছেন ওই কমিটির সদস্য তিনজন চিকিৎসক।
এমতাবস্থায় সাতক্ষীরার সরকারি চিকিৎসা সেবার সেবার মান উন্নয়নে বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিসহ স্বাস্থ্য খাতের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা ধারাবাহিকভাবে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য প্রতিবাদ সভা ও মতবিনিময় সভা করেছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০টার সময় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য বরাবর এই লুণ্ঠনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে সাতক্ষীরার নাগরিক অধিবার আদায়ের অগ্রণী সংগঠন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা। কিন্তু, আমাদের নিয়মিত পথ সভা ও আন্দোলন কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণের ব্যাপক জনসমর্থন দেখে আতঙ্কিত হয়ে সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য খাতের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের নেপথ্যে জড়িত থাকা দুর্নীতিবাজরা একটি দালাল চক্রকে দিয়ে একই দিনে একই স্থানে একই সময়ে একটি সাজানো কর্মসূচি ঘোষণা করে শহরে মাইকিং করে। আমরা আপনাদের শক্তিশালী ও অনুসন্ধানী লেখনী দিয়ে নিকট এসকল দুর্নীতিবাজদের চেহারা জনসমক্ষে উম্মোচন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত একটি মহল তাদের মুখোশ খুলে যাওয়ার আশংকায় নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার দুর্নীতিবিরোধী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে প্রতিহত করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা শহরের শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়ে সাতক্ষীরার ২২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে তরাণি¦ত করার আহ্বান জানান তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার আহবায়ক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার, শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, সুধাংশু শেখ সরকার, মশিউর রহমান পলাশ, অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন, রওনক বাসার প্রমুখ।
২৩.০৪.২০১৯