নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ঢুকে ফিল্মী কায়দায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সভাপতি সম্পাদকসহ ১০ সিনিয়র সাংবাদিককে আহত করার ঘটনায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার নং ৬৫। এদিকে, হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলার সর্বষ্তরের সাংবাদিকরা।
তারা অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও আইনে সোপর্দ করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে কোনো সাজানো মামলা খাড়া করে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হলে তার ফল ভালো হবে না বলেও জানান সাংবাদিকরা।
শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে সাংবাদিকরা বলেন বৃহস্পতিবারের এই হামলার নেপথ্য গডফাদারদেরও চিহ্ণিত করে আইন আমলে আনতে হবে। হামলা চলাকালে মাত্র ১০০ গজ দুরের সাতক্ষীরা থানা থেকে পুলিশ আসতে অহেতুক বিলম্ব করে হামলায় মদদ যোগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
জেলার ৭টি উপজেলা প্রেসক্লাব রিপোর্টার্স ক্লাব এবং অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের অংশগ্রহণে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় হামলাকারীরা প্রেসক্লাব সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, সাবেক সভাপতি চ্যানেল আইয়ের আবুল কালাম আজাদ, প্রেসক্লাব সম্পাদক সময় টিভির মমতাজ আহমেদ বাপী, মোহনা টিভির আবদুল জলিল, সাবেক সম্পাদক আবদুল বারীসহ ১০ সাংবাদিককে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
সাংবাদিকরা বলেন, এরই মধ্যে ২৪ জনকে আসামি করে সাতক্ষরিা থানায় মামলা করেছেন প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী। এতে অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন। তারা সবাই চোরাচালানি, চোরাঘাট মালিক, মাদকপাচারকারী, স্বর্ণ চোরাচালানি, মাদকসেবী, চাঁদাবাজ, ত্রাণের চাল চোর ও ঘের দখলকারী বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিকরা। তারা সবাই এমপি রবি বাহিনীর চেলা চামুন্ডা বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
প্রেসক্লাবের সহসভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলাম, সাবেক সাধারন সম্পাদক আবদুল বারী, এম কামরুজ্জামান, রুহুল কুদ্দুস, ডেইলি সাতক্ষীরার সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, দৈনিক মানবজমিনের ইয়ারব হোসেন, যমুনা টিভির আহসানুর রহমান রাজীব, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির আবুল কাসেম, কালের কণ্ঠর মোশাররফ হোসেন, দৈনিক সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাংবাদিকবৃন্দ।
তালা, দেবহাটা, কলারোয়া , আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার প্রেসক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন থেকে আসা বক্তব্যদানকারী সাংবাদিকরা হলেন- আশাশুনি প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব ও রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, দেবহাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল ওহাব ও গোলাম ফারুক, কলারোয়ার প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক আরিফ মাহমুদ ও রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আজাদুর রহমান খান চৌধুরী পলাশ, তালার রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি জুলফিকার রায়হান, শ্যামনগরের সামিউল মনির ও পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু, কালিগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি নিয়াজ কাওসার তুহিন প্রমুখ সাংবাদিক। তারা জেলা পর্যায়ের সিনিয়র সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তারা বলেন, সাতক্ষীরা সদর আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব কিছুদিন আগে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হয়। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ২৪ ঘন্টা পার না হতেই তার চেলা চামুন্ডা ও চামচারা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে হামলা করে রক্ত ঝরিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এ ছাড়া সাংবাদিকদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন সাতক্ষীরা ১, ৩ ও ৪ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও এসএম জগলুল হায়দার ছাড়াও জেলার সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাব ভবনে এসে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান।
আগামিকাল শনিবার সাতক্ষীরার তিনজন সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী সংগঠনসহ সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে প্রেসক্লাব ভবনে মত বিনিময়ের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দাবি আদায়ে জেলার সব উপজেলায় পৃথক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন সাংবাদিকরা।
সিসিটিভি ক্যামেরা কারা ভাঙে
সচরাচর চোর ডাকাত, খুনি এবং অপরাধ সংঘটনকারীরা তাদের অপরাধের আলামত ঢাকা দেওয়ার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা অথবা টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে সিসিটিভি সংযোগ টেনে হেঁচড়ে বিচ্ছিন্ন করে একই অপরাধ করলেন নামধারী সাংবাদিক ও তাদের সহযোগীরা।
মামলার আসামি হলেন যারা
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে নিন্দনীয় হামলার সাথে জড়িতদের ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনের নামে মামলা করেছেন প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে যারা আসামী হয়েছেন এরা হলেন- টাকা আত্মসাত ও প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্যপদ হারানো জিএম মনিরুল ইসলাম মিনি, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, মনিরুল ইসলাম মনি ও শামীম পারভেজ। অন্য আসামিরা হলেন- পলাশপোলের জাকির হোসেন মিঠু, চায়না বাংলা ও সিবি হাসপাতালের মালিক এ কে এম আনিসুর রহমান, এসএম রেজাউল ইসলাম, পলাশপোলের কামরুল হাসান ওরফে চটা কামরুল, ব্রক্ষ্মরাজপুরের মনিরুজ্জামান তুহিন, নলকূড়ার খন্দকার আনিসুর রহমান, পুরাতন সাতক্ষীরার অমিত ঘোষ, মুনজিতপুরের আকাশ ইসলাম, মুহুরী মনিরুজ্জামান মনি, কাশেমপুরের শহিদুল ইসলাম, মুহুরী হাফিজুর রহমান, শ্রীউলার হাফিজুর রহমান পলাশ, বুলারাটির শেখ আমিনুর রশীদ সুজন, মেহেদীবাগের আক্তারুজ্জামান ওরফে আক্তারুল, মুনজিতপুরের শেখ আব্দুল হাকিম, পলাশপোলের শাহ আলম, সরকার পাড়ার তাজমিনুর রহমান টুটুল, মুনজিতপুরের জাদু ও দীপ, ভবানীপুরের আক্তারুল ইসলাম।
দুই ঘণ্টাার গল্পবাজি, হঠাৎ হাসপাতাল বেডে
বৃহস্পতিবার হামলার পর মনিরুজ্জামান তুহিন, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, মনিরুল ইসলাম মনি, শহিদুল ইসলাম, শামীম পারভেজসহ বেশ কয়েকজন হলরুমে এসে বীরত্বপূর্ণ গল্পগুজব করছিলেন। এর আগে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের মুখোমুখি হয়ে জবাবদিহিতা করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ সিবি হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স এলো। এসময় তুহিন, শহীদুলসহ কয়েকজন উহ্ আহ্ করতে করতে অ্যাম্বুলেন্সে উঠলেন। এরপর তারা হাসপাতালে শুয়ে ছবিতে পোজ দিলেন। পরদিন শুক্রবার একটি কাগজে ৪ টি ছবি দিয়ে বলা হলো তারা আহত এবং তাদের অবস্থা আশংকাজনক!
সাংবাদিকদের হুশিয়ারি
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ফিল্মি স্টাইলে হামলাকারীদের রক্ষার জন্য একটি মহল পাল্টা মামলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেছেন কোন সাজানো মামলা তৈরি করে হামলাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করা হলে ফল ভালো হবে না।
মানববন্ধনের সামনে ওরা কারা
শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন চলাকালে আগেরদিনের অন্যতম হামলাকারী মুনজিতপুরের আব্দুল খালেকের ছেলে শেখ আব্দুল হাকিমকে দেখে সাংবাদিকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এ সময় সদর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম তাকে হুশিয়ার করে বলেন এখনি সরে যান। একথা শুনতেই আব্দুল হাকিমের ভো দৌড়।