নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আপনি অমুক বলছেন।’ উত্তর ‘জ্বী বলছি’। ‘আমি সর্বহারা পার্টি এমএল গ্রুপের আঞ্চলিক প্রধান। আপনি আমাদের লীডারের সাথে সালাম দিয়ে কথা বলুন’।
এভাবেই মোবাইল ফোনে এক এক করে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১১ জন শিক্ষককে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করেছে গোপন চরমপন্থি দলের ক্যডাররা। তারা বলেছে ‘ টাকা না দিলে ১০ মিনিটের মধ্যে তোর কি হাল হয় দেখে নিস’। এর পর ফোন বন্ধ। যে দুটি ফোন থেকে গত রোববার ও সোমবার কলেজ চলাকালে এই হুমকি দেওয়া হয়েছিল সেগুলি হচ্ছে ০১৯৩৪৫০২৯০৪ ও ০১৯৯৯১৩৯৬৬২। তবে পুলিশ এই নম্বর দুটি কোন নামে রেজিস্ট্রেশন করা তা খুঁজতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক বলাই চন্দ্র ঘোষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে সাতক্ষীরা থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করেছেন ( নম্বর ২৩০ তারিখ ০৫.০৮.১৯)। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন বাংলা লিংকের দুটি নম্বর থেকে কলেজের ১১ জন শিক্ষককে হুমকি দিয়ে চাঁদা চেয়েছে সর্বহারা পরচিয়দাতা সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন ফোন পেয়ে আতংকিত হয়ে প্রশ্ন করা হয় ‘কি হয়েছে’। জবাব এলো ‘কি হয়েছে মানে, কি হবে তাই অনুমান করুন’। এরপরই তারা স্বর নামিয়ে বলেছে ‘জানেন তো আমরা সর্বহারা পার্টি করি। এজন্য আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে আইনশৃংখলা বাহিনী হয় এনকাউন্টারে মেরে ফেলেছে, না হয় অনেককে গুলি করে আহত করেছে। এরকম অনেক নেতা বিভিন্ন স্থনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো দরকার। এজন্য চাই টাকা। কম পক্ষে ৩০ লাখ টাকা এখনই দরকার। আপনি কতটুকু দিতে পারবেন বলুন’। বলাই চন্দ্র জানান ‘টাকা কেনো দেবো, এতো টাকা পাবোই বা কোথায়’ এসব কথার জবাবে তারা বলেছে ‘সময় দিচ্ছি যেভাবে হোক টাকা যোগাড় করে আমাকে জানাবেন। আমার লোক সেখানে যেয়ে টাকা নিয়ে আসবে। খবরদার চালাকি করার চেষ্টা করলে কিন্তু ফল ভালো হবে না’। তিনি বলেন বিভিন্নজনকে বিভিন্ন ভাষায় তারা আরও বলেছে টাকা না দিলে ছেলে মেয়ে অথবা স্ত্রীকে অপহরন করা হবে’। বলাই চন্দ্র ঘোষ জানান কলেজ অধ্যক্ষ সাতক্ষীরার বাইরে থাকায় তার সভাপতিত্বে এই হুমকির বিষয়ে শিক্ষকদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক হয়েছে। সেখান থেকে সহকর্মী অধ্যাপক ওলিউর রহমান ওই নম্বরে ফোন করলে তারা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে ‘টাকা দিবি না , দশ মিনিটের মধ্যে দেখিয়ে দিচ্ছি’। এরপ্রই ফোন লাইন কেটে দিয়েছে কথিত সর্বহারা পার্টি প্রধান।
যাদের কাছে ফোন করে এই টাকা দাবি করা হয়েছে তারা হলেন অধ্যাপক বলাই চন্দ্র ঘোষ,সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ,সহকারী অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, সহকারী অধ্যাপক মোছলেহুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মশিউল আজম, সহযোগী অধ্যাপক নসরুল ইসলাম, প্রভাষক সন্দীপ সানা, প্রভাষক আবু রায়হান, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, প্রভাষক মহিতোষ নন্দী, জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ধ্রুব কুমার ও প্রভাষক সাধান কুমার সরকার। তাদের সবার নাম উল্লেখ করে সাতক্ষীরা থানায় জিডি করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান বিষয়টি সম্পর্কে তারা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন। তার পরামর্শে জিডি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুল রহমান বলেন, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হুমকিদাতাদের আটক করারও চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।