আবু ছালেক:
যখন তোমার কেউ ছিলনা তখন ছিলাম আমি এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি, মাত্র কয়েক বছর হলো সব আশা আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে আমাকে আর কেউ ব্যবহার করে না। যখন ছিলনা বিদ্যুৎ তখন আমাকে ব্যবহার করত, কদর করত কিন্তু এখন সোলার, এবং বিদ্যুৎ হওয়াই আমাকে কেউ কদর করে না, ব্যবহার করে না, আমাকে হেয় করে ফেলে রাখছে বিভিন্ন খানাখন্দকে, সহ ময়লা-আবর্জনার স্থানে, এজন্য কথাটি মনে পড়ে গেল যখন তোমার কেউ ছিলনা তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি,চোখের সামনে থেকে চোখের পলকে চোখের আড়ালে চলে গেল হারিকেন। গ্রামে গ্রামে এখন চলে এসেছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সাময়িক চলে গেলেও এখন চার্জলাইট, মোমবাতি দিয়ে কাজ সেরে নেওয়া যায়। অথচ, একদিন অর্থাৎ দশ, পনেরো-বিশ বছর আগেও সন্ধ্যা হলেই ঘরের সামনে চিমনি পরিষ্কার করতে বসতেন বাড়ির বৌ-ঝি। কিশোর-কিশোরীরা সন্ধ্যা হলেই হারিকেনের আলোয় পড়তে বসত। চোখে যেন আলো না লাগে সে জন্য চিমনিতে কাগজ আটকে রাখত। হারিকেনের আবার আলোর কমবেশি জোর দেওয়া যেত। হারিকেন অন্ধকার দূর করত অল্প একটু, তার চেয়ে বেশি ধারণ করত রহস্যময় একটা আবহ। বৈদ্যুতিক বাতিতে এখন আলো ঝলমলে চারদিক। সেই রহস্য নেই, সেই রোমাঞ্চ নেই।হারিকেন হারিয়ে যাওয়ায় ভীষণ ক্ষতি হলো আমাদের বিজলী বাতি এলো ঘুচে গেলো রাত আর দিনের তফাৎ আমরা ভুলে গেলাম কখন ঘুমাতে হয় কখন জাগতে হয় কী নিবিড় ইন্দ্রজাল রচিত হলো আমাদের চারপাশে সন্মোহিত দ্বিপদের মতো নির্বিকার চলাফেরায় অভ্যস্ত হলাম আমরা নির্বিবাদে শিকেয় তুলে রাখলাম প্রবাদতুল্য জীবনচক্রকে মন আর মেধা উত্তেজনা সুপ্রাচীন জৈবিক উদ্দীপনা আমরা হারিয়ে ফেললাম অক্লেশে নির্জীব শরীর অভিনিবিষ্ট করলাম আলোর তপস্যায় অথচ আমরা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলাম অন্ধকারের প্রায়োগিক দিক আঁধারের প্রয়োজনীয়তা উপকারিতা হারিকেন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে নিশ্চুপ শুয়ে রইলো অপঠিত ইতিহাসে সীমাহীন অসচেতনতায়।