দেশের খবর: যাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো পরিচালনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তাদের সম্পদের অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এজন্য দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
সোমবার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে দুর্নীতি দমন কমিশনের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “অবৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমে যে বা যারা জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান করা হবে।”
দুই সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।
তখন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ধরতে অভিযান নামে র্যাব। ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তার করার পর ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
একই সঙ্গে ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার আধুনিক আয়োজন ক্যাসিনোর সরঞ্জামের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ করে র্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ২৪ লাখ টাকাও।
শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।
গত বুধবার ঢাকার মতিঝিলের ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রে র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো মেলার পাশাপাশি সেগুলো পরিচালনায় যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরদিন কলাবাগান ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে।
ওই দিন ঢাকা ওয়ান্ডারাস ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও বনানীর আহমদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার এবং ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ওয়ান্ডারাস ক্লাবটি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. কাওসার ও ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাইদ চালান বলে র্যাব জানিয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়, যেগুলো জুয়ার টাকায় তৈরি সম্পদ বলে র্যাব জানিয়েছে।
ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে গেণ্ডারিয়া থানা কমিটির সহ সভাপতি এনামুল হক এনু ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন শেয়ারহোল্ডার। আর তার ভাই রুপন ভূঁইয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া গত সপ্তাহের রোববার মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটো রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ডসহ ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর বুধবার রাতে মনিপুরীপাড়ার বাসা থেকে পাঁচ বোতল মদসহ ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হন।
লোকমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনিই ক্লাবের ঘর ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। আর ওই ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার। ক্যাসিনোর ভাড়া থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন লোকমান। অস্ট্রেলিয়ার দুটি এবং দেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার গচ্ছিত টাকার পরিমাণ প্রায় ৪১ কোটি টাকা।
ঢাকার ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর সংগঠনটির চার নেতা গেছেন আত্মগোপনে।
এরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুল এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মতিঝিলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ।