নিজস্ব প্রতিনিধি : সমবায় সমিতির নামে কথিত মহাজনী ঋণ সুদ আর চক্রবৃদ্ধি সুদের জালে আটকা পড়েছেন সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার শতাধিক মানুষ। তাদের ঘাড়ে চেপেছে লাখ লাখ টাকার ঋণের বোঝা। এই ঋণ তারা শোধ দিতে পারছেন না। অপরদিকে ঋণদাতা রহমত আলি তাদেরকে আইনি নোটিশ দিয়ে নাজেহাল করছেন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেনও অনেকে।
ভুক্তভোগীরা জানান তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির নামে এর সভাপতি রহমত আলি ব্যবসায়ী ও আগ্রহী অন্যদের অনুকূলে শতকরা মাসিক ৩০ টাকা হারে সুদের চুক্তিতে ঋণ দিয়ে থাকেন। এ সময় টাকার অংক ফাঁকা রেখে গ্রহিতার কাছ থেকে স্বাক্ষরযুক্ত ব্যাংক চেক রেখে দেন। শর্তে বলা হয় যতদিন মূল টাকা পরিশোধ না হবে ততদিন শতকরা মাসিক তিরিশ টাকা হারে সুদ বহন করতে হবে। প্রয়োজনের মুখে গ্রাহকরা এতে আপত্তি না করেই ঋণ নিয়ে থাকেন। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ না করা গেলে সমিতির সভাপতি ব্যাংক চেকে নিজের ইচ্ছা মতো টাকার অংক বসিয়ে গ্রহিতার কাছে উকিল নোটিশ পাঠান। এর জবাব না পেলে শেষ পর্যন্ত তাকে হাজতবাস করতে হয়।
ঋণ গ্রহিতা তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা গ্রামের ফিরোজ কবির জানান ২০১৩ সালে তিনি ব্যবসায়িক প্রয়োজনে শ্রমজীবী সমবায় সমিতির কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। শর্ত অনুযায়ী তিনি এক বছর যাবত মাসিক সুদ পরিশোধ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি মূল টাকা দুই লাখ পরিশোধ করতে চাইলে তার কাছে ১৯ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এমনকি বলা হয় ফাঁকা চেকে টাকা বসিয়ে এই টাকা আদায় করা হবে। তিনি বলেন আমি টাকা শোধ দিতেও পারছিনা, আবার সুদও টানতে পারছি না।
পাটকেলঘাটার কাটাখালি গ্রামের শেখ আজিজুর রহমান জানান তিনি শতকরা মাসিক ৩০ টাকা সুদ হারে এক বছর মেয়াদে ২০১৮ সালে সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেন। এই টাকা তিনি পরিশোধের আয়োজন করতেই তার কাছে একটি লিগ্যাল নোটীশ পাঠিয়েছেন সমিতির সাধারন সম্পাদক আশিকুজ্জামান মোড়ল। এতে বলা হয় তিনি দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। সুদসহ তা এখন তিন লাখে উন্নীত হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ায় তারা সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে। এই টাকা যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সমবায় সমিতির পক্ষে আশিকুজ্জামান মোড়ল আজিজুর রহমানের কাছে সম্প্রতি লিগ্যাল নোটীশ পাঠিয়েছেন। আজিজুর রহমান এর বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি জানান সমিতির কোনো নিবন্ধন নেই । এটা বেআইনি কারবার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে পাটকেলঘাটার লালচন্দ্রপুর গ্রামের সামিউল ইসলাম জানান তার পিতা রবিউল ইসলাম সমিতির একজন সদস্য হিসাবে তাদের দোকান আয়ের ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা সমিতিতে জমা রাখেন। এই জমাকৃত টাকা আত্মসাতের লক্ষ্যে তার বাবার দেওয়া একটি ফাঁকা চেকে ২২ লাখ টাকা বসিয়ে এর ভিত্তিতে সমিতির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান। সামিউল জানান এই সমিতির প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে রয়েছেন সরুলিয়া গ্রামের আবদুল হাকিম, মো. লুৎফর গাজি, আবদুল গনি ঢালি, আসাদুল সরদারসহ অনেকেই। তারা ঋণের জালে জড়িয়ে নাজেহাল হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা এই জাল থেকে রক্ষা পেতে বারবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। মানববন্ধন করেছেন। তারা জেলা প্রশাসকের গনশুনানীতে অংশ নিয়ে সেখানে অভিযোগ তুলে ধরেছেন। জেলা প্রশাসক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রহমত আলি বলেন তিনি ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এখন এই দায়িত্বে নেই তিনি। তবে তিনি জানান সুদের হার ৩০ টাকা নয় ১২ টাকা হিসাবে ঋণ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সমিতির নিবন্ধন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন জেলাব্যাপী এর অনেক শাখা রয়েছে। টাকা লেনদেনের জন্য প্রত্যেকের কাছে পাসবই রয়েছে। তিনি বলেন যারা এসব অভিযোগ করছেন তারা আদালতের মাধ্যমে সাজা খেটেছেন ঋণ পরিশোধ না করার কারণে। তিনি উল্লেখ করেন গ্রাহকের দেওয়া চেকে নির্ধারিত সময়ের সুদ ও মূলধন এক করে লেখা হয়ে থাকে। বেশি লিখে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।