বিদেশের খবর: ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন হামলায় ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ইরানে।
ইরানে এরই মধ্যে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি বলেছেন হামলার নেপথ্যে থাকা ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ’ নেয়া হবে।
ইরানের পররাষ্টমন্ত্রী জাভেদ যারিফ বলেছেন এটি ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী পদক্ষেপ।’
ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পোরেশনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামেজান শরীফ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কুদস ফোর্সের কমান্ডারকে হত্যার ‘কঠোর প্রতিক্রিয়া’ ভোগ করবে।
জেনারেলের মৃত্যুর বিষয়টই ইরানের মিডিয়াতেও গুরুত্বের সাথে জায়গা পেয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধে তার অবদানের জন্য প্রশংসা করা হয় তার।
জেনারেল সোলেইমানির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে ইরানের অনেকগুলো টিভি চ্যানেল তাদের স্ক্রিনের উপরের বাম পাশে কালো ব্যান্ডের চিত্র প্রদর্শন করছে।
তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয়েছে পার্সিয়ান ভাষায় লেখা ‘হ্যাশট্যাগ হার্শ ভেঞ্জেন্স’ বা নির্মম প্রতিশোধ।
রেভোলিউশনারি গার্ডসের সাবেক কমান্ডার মোহসেন রেজায়েই বলেছেন, “ইরান অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেবে।”
টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেইয়েদ মোহাম্মদ মারান্দি বলেন যে প্রতিশোধের সময় আসন্ন এবং সকল পশ্চিমা নাগরিককে – বিশেষ করে অ্যামেরিকানদের – অতিস্বত্তর মধ্যপ্রাচ্য ছাড়ার তাগিদ দেন তিনি।
ইরানের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের আয়োজনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ’ করার উদ্দেশ্যে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার নামাজের পর সারা দেশে ‘অ্যামেরিকা বিরোধী’ ও ‘ইহুদিবাদ বিরোধী’ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম আইআরআইএনএন জানায়।
রাশিয়া, চীনের সমালোচনা
জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যায় মার্কিন সেনা অভিযানের সমালোচনা করেছে বিশ্বের পরাশক্তিরাও।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে তারা ‘সোলেইমানিকে হত্যার উদ্দেশ্যে মার্কিন অভিযানকে অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ’ হিসেবে মনে করে।
বিবৃতিতে বলা হয়: “সোলেইমানি ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বস্তভাবে সেবা করে গেছেন। ইরানের মানুষের কাছে আন্তরিকভাবে দু:খপ্রকাশ করছি আমরা।”
চীন এই রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতি শান্ত করতে সব পক্ষকে ‘বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে’ সংযম ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময়ই জোর প্রয়োগের বিরোধী চীন।”
“এই ঘটনার সাথে জড়িত পক্ষদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে, শান্ত থাকতে ও সংযম অনুশীলন করতে অনুরোধ করবো আমরা, যাতে অস্থিরতা বৃদ্ধি না পায়।”
সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও
মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলার সমালোচনা করে টুইটারে একটি পোস্ট করেছেন।
তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছেন যে তিনি ‘খড়কুটোর বাক্সে ডায়নামাইট ছুঁড়ে ফেলেছেন’।
তিনি লিখেছেন, “মধ্যপ্রাচ্য বড় ধরণের একটি সংঘাতের মুখোমুখি পড়তে পারি আমরা।”
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই পদক্ষেপ নেয়ার ফলে ঐ অঞ্চলে থাকা অ্যামেরিকানরা হুমকির মুখে পরবেন।
ওদিকে বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস তাদের সকল নাগরিকদের ‘অতিস্বত্বর’ ইরাক ছাড়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে টুইটারে পোস্ট করেছে।
*বিবিসি বাংলা অবলম্বনে