ডেস্ক: গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ কাউকে চেঁচিয়ে উঠতে শুনলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি তো মাঠে ছাগল চরাতে গিয়েছেন। বিকেলে ফিরবেন।’’ কিংবা, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে পাবেন না। তিনি তো চৌরাস্তার মোড়ে মুদির দোকানে।’’
চোখ কপালে উঠছে? এখানে অবশ্য কোনো দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে না। যে গ্রামের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এমন নামেই পরিচিত বাসিন্দারা। ফলে সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই রোজ মাঠে ছাগল চরাতে যান রাষ্ট্রপতি। নিত্য মুদির দোকান খুলে বসেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের রাজস্থানের বুন্দি জেলার সদর দফতর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম রামনগর। সেখানে বসবাস করে কঞ্জর সম্প্রদায়। জনসংখ্যা সাকুল্যে ৫০০। সেখানেই আপাতত বাস রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল এবং প্রধানমন্ত্রীর। ভাল করে খুঁজে দেখলে কালেক্টর, ম্যাজিস্ট্রেট, আইজি, ডিজি, হাবিলদারেরও হদিস পাওয়া যাবে।
নামের এমন বাহার কেন? উত্তরটা দিলেন স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক। তিনি জানালেন, ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই লেখাপড়া জানেন না। যদিও নানা অসামাজিক কাজকর্মের সূত্রে কাউকে না কাউকে প্রায়ই থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আদালতে। ছোট্ট গ্রামের বাইরে যে এত ঝাঁ চকচকে একটা জগৎ আছে, তা দেখেই রীতিমতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ফিরে আসেন তারা। আর বাড়ি ফিরেই পরিবারের ছানাপোনাদের নামকরণ করে ফেলেন সেই সব চমকের নামে।
যেমন সদ্য পঞ্চাশে পা দিয়েছেন কালেক্টর। জীবনে স্কুলে যাননি। তা হলে এমন নাম? জানালেন, তার জন্মের সময় গ্রামে এসেছিলেন এক জেলাশাসক। তার ব্যক্তিত্ব সকলকে এতটাই ছুঁয়ে যায়, যে ওই সদ্যোজাতের নামকরণ করা হয় কালেক্টর। আর এক বাসিন্দার নাম কংগ্রেস। তিনি অবশ্য রাজনীতি ভক্ত। তার পরিবারে সনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা— সকলেই রয়েছেন।
গ্রামের আর এক ব্যক্তি হাইকোর্ট। তিনি প্রতিবন্ধী। তার দাপটে গ্রামের এ মাথা থেকে ও মাথা, সবাই তাকে চেনেন। তার জন্মের সময় ঠাকুরদাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। হাইকোর্টে থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে গ্রামে ফিরে আসার সময় নাতির জন্য নামটা নিয়ে আসেন তিনি।
স্থানীয় এক স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি কর্মী রমেশচন্দ্র রাঠৌর জানান, নয়নওয়া অঞ্চলের বরগনি, হনুমন্তপুরা, সুয়ালিয়া এবং সেসোলা গ্রামের মোগ্গিয়া এবং বাঞ্জারা সম্প্রদায়ের পছন্দ মোবাইলের ব্র্যান্ড। তেমনই আবার আর্নিয়া গ্রামের মিনা সম্প্রদায়ের মহিলাদের পছন্দ মিষ্টি। তিন বলেন, ‘‘প্রথমে তাদের এসব নামে ডাকতে গিয়ে ঘাবড়ে যেতাম। এখন অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।’’
অনেকের কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এসব নাম পাওয়া গেছে স্কুলের রেজিস্টার খাতাতেও। এসব সম্প্রদায়ের যেসব বাচ্চারা স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাদের এসব নামেই ডাকা হয়।
সেখানে পড়ুয়াদের তালিকায় যেমন রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড, চিপ, সিম কার্ড, ‘মিস কল’, জিওনি, তেমনই রয়েছে নমকিন, ফোটোবাই, জলেবি, মিঠাই, ফালতু। তবে যে হারে ব্র্যান্ডের চাকচিক্য বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আরও কিছু নতুন ব্র্যান্ড স্কুলে ভর্তি হতে আসবে, তা নিয়ে আপাতত নিশ্চিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। সূত্র: অানন্দবাজার