আসাদুজ্জামান : আশাশুনির বুধহাটা বাজারে গুরুতর অসুস্থ একটি গরু জবাই করার চেষ্টার ঘটনায় যাতে মামলা না হয় সেজন্য ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের টাকা এক পুলিশ কর্মকর্তসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে ঘুষ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাহপুর গ্রামের শ্রী বাবু মন্ডলের ছেলে পল্লী চিকিৎসক উত্তম মন্ডলের লক্ষাধিক টাকার একটি অসূস্থ জার্সি গাভী গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপনে বুধহাটা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জোড়দিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের পুত্র মোমরেজ কসাই ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যান। এই অসুস্থ গরুটি জবাইয়ের জন্য পরদিন বুধবার ভোরে বুধহাটা বাজারের করিম মার্কেটের গরুর মাংস ব্যবসায়ী কুল্যা গ্রামের মৃত চাঁন্দের আলীর ছেলে কসাই আরিফুল ইসলামের কসাই খানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় বুধহাটা বাজারে জবাইয়ের জন্য অনুমতি দানে পরীক্ষা-নীরিক্ষার দায়িত্বে থাকা বুধহাটা ইউপি সদস্য রেজওয়ান আলি পশুটি দেখে অসুস্থ বুঝতে পেরে তিনি জবাইয়ের অনুমতি দেননি। এরপরও তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। এক পর্যায়ে ধুলিহর এলাকার এক গ্রাম পুলিশ সাংবাদিকসহ স্থানীয় লোকজনকে ঘটনাটি জানালে বহু মানুষ সেখানে এসে মেম্বর রেজওয়ান আলির সহায়তায় গরু জবাইয়ের চেষ্টা রুখে দিয়ে আশাশুনি থানার ওসি (তদন্ত) জুলফিকার আলীকে জানান। এরপর আশাশুনি থানার এএসআই আমিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে সেখান থেকে ৯ কসাই পালিয়ে যান।
পরে গরুটি তার মালিকের কাছে ফেরত পাঠানে হয়। গরুর মালিক পল্লী চিকিৎসক উত্তম মন্ডল জানান, গত রোববার একটি বাচ্চা প্রসবের পর জরায়ুতে ক্ষত হয়ে গরুটি মারাত্মক অসুস্থ হয়। এজন্য গরুটি আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার গ্রামের এক বেপারির কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এরপর বুধবার গরু ফেরতের পর আমি তাদের সমুদয় টাকাও ফেরত দিয়েছি। তিনি আরো জানান, গরুটি ওই দিনই সন্ধ্যায় মারা যায়।
এদিকে, ৯ কসাইয়ের নামে মামলা রেকর্ড না হওয়ার শর্তে অসুস্থ গরু জবাইয়ের চেষ্টার ঘটনাটি ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ জন্য আশাশুনি থানার ওসি (তদন্ত) জুলফিকারকে ৪০ হাজার টাকা ও স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার নামে আরো ৫ হাজার টাকা স্থানীয় এক ইউপি মেম্বরকে সাথে নিয়ে মোমরেজ কসাই নিজ হাতে প্রদান করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি মোবাইলের রেকর্ডিং এর কথোপকথন ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের হাতেও এসেছে।
এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার ওসি (তদন্ত) জুলফিকার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে, স্থানীয় এক ইউপি মেম্বর নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাকা লেন-দেনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
অপরদিকে, এ ঘটনায় বুধহাটা বাজার সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সচেতনমহল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।